গ্রেপ্তার ও সহিংস ঘটনার মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু

গাজীপুর মহানগরীর যোগীতলা এলাকায় একটি পিকআপ শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা
ছবি: প্রথম আলো

একদিকে ধরপাকড় ও গ্রেপ্তার, অন্যদিকে সড়কে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের সহিংস ঘটনা—এর মধ্যে চলছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর অবরোধ কর্মসূচি। আজ চতুর্থ দফায় সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার সড়ক, রেল ও নৌপথে এই অবরোধ শুরু হচ্ছে। রোববার সকাল ছয়টা থেকে শুরু হয়ে আগামী মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত অবরোধ চলবে।

অবরোধ কর্মসূচি শুরুর আগে গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীতে ছয়টি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রাত ৮টা ২০ মিনিট থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে মতিঝিল, গাবতলী, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, আগারগাঁওয়ের তালতলা ও কাফরুল থানা এলাকায় আগুন দেওয়ার এসব ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ৭১টি যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটল। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ীতে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন একজন যাত্রী।

আরও পড়ুন

এ ছাড়া গতকাল রাতে গাজীপুরে একটি ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে আগুন দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের এমন ঘটনা অন্তত ৯০টি। সংশ্লিষ্ট জেলার প্রথম আলোর প্রতিনিধি, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশন চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে তফসিল ঘোষণা করতে পারে। এটি বিবেচনায় রেখে অবরোধ কর্মসূচি বাড়িয়েছে বিরোধী দলগুলো। তফসিল ঘোষণার পর কর্মসূচি আরও জোরদার করার পরিকল্পনা করছে আন্দোলনরত সরকারবিরোধী দলগুলো।

আরও পড়ুন

বিএনপির পাশাপাশি গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, এলডিপি, গণ অধিকার পরিষদসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো পৃথকভাবে অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীও পৃথকভাবে রবি ও সোমবার অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে। এটি হবে চতুর্থ দফা অবরোধ। এর আগে ৩১ অক্টোবর থেকে সারা দেশে অবরোধের কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি। তিন দফায় মোট সাত দিন এই অবরোধ হয়। চতুর্থ দফায় আজ ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শুরু হলো।

‘২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ হামলা চালিয়ে পণ্ড করা, মহাসচিবসহ নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের’ দাবিতে টানা কর্মসূচি করছে বিএনপির নেতৃত্বে সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও জোট। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

গতকাল এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সর্বাত্মক সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল করার আহ্বান জানান।

আরও পড়ুন

‘৫৭ সেকেন্ডে ৪৩ সিল মারতে বেসামাল সরকার’

সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘৫৭ সেকেন্ডে নৌকা মার্কায় ৪৩ সিল মারার নির্বাচনের জন্য বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার বেসামাল হয়ে পড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘অতীতের মতো আরেকটি ভুয়া নির্বাচনের তামাশা করতে এই ফ্যাসিস্ট সরকার বেপরোয়া এবং ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।’

নেতা-কর্মীদের অব্যাহতভাবে গ্রেপ্তারের অভিযোগ করে রিজভী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৩১৫ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১২টি মামলা দায়ের করে ১ হাজার ৩৭০ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়।

শ্যামাপূজার আচার–অনুষ্ঠান অবরোধের আওতামুক্ত

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শ্যামাপূজার আচার–অনুষ্ঠান ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি অবরোধ কর্মসূচির আওতার বাইরে থাকবে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গত রাতে এক বিবৃতিতে এসব কথা জানিয়েছেন।

এ ছাড়া গণমাধ্যম ও সংবাদপত্র বহনকারী গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন সিলিন্ডার বহনকারী গাড়ি অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে।