উপজেলা পরিষদ নির্বাচন
বিএনপির প্রার্থী তৃতীয় ধাপেও অর্ধশত ছাড়াতে পারে
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে তাঁদের বহিষ্কার করা ছাড়া বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে কিছু নেতাকে বহিষ্কারের ফলে সাংগঠনিক ভিত্তি কিছুটা দুর্বল হতে পারে, যা দলকে উপেক্ষা করতে হচ্ছে সচেতনভাবে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপেও বিএনপির অন্তত অর্ধশত নেতা–কর্মী প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দলটির সাবেক, বর্তমান ও একজন বহিষ্কৃত নেতাসহ ২৬ জনের নাম পাওয়া গেছে। বাকি ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, ২৯ মে তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলা পরিষদে নির্বাচন হবে। এর মধ্যে ২৩ উপজেলায় বিএনপির স্থানীয় নেতারা প্রার্থী হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রংপুরের গঙ্গাচড়া, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ও খুলনার কয়রা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিএনপির দুজন করে ছয়জন প্রার্থী হয়েছেন। তাঁরা হলেন গঙ্গাচড়ায় জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মোকাররম হোসেন ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুজ্জামান প্রামাণিক। ফুলবাড়িয়ায় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও উপজেলা বিএনপির সদস্য শাহ মো. আলমগীর। কয়রায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ আবদুর রশিদ ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রব।
গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তাঁরা নির্বাচন করছেন এবং পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন।
ফুলবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য শাহ মো. আলমগীর ফুলবাড়িয়া আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবদুল মালেক সরকারের মেয়ের জামাতা। আবদুল মালেক ফুলবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। মেয়ের জামাতার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আবদুল মালেক সরকার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির কিছু লোকের ইন্ধনে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। আমি চাইব তিনি যেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন।’
তিন ধাপে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির নেতাদের মধ্যে প্রার্থী ৭৯ জন। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২৮ জন, দ্বিতীয় ধাপে ২৫ জন। তৃতীয় ধাপে এই পদে ২৬ জনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা স্থানীয়ভাবে মোটামুটি প্রভাবশালী এবং সাংগঠনিকভাবেও শক্তিশালী।
অবশ্য শাহ মো. আলমগীর বলেন, ‘আমরা ফুলবাড়িয়ার পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ। এ অঞ্চলের মানুষের আগ্রহে আমি চেয়ারম্যান পদে অংশ নিয়েছি। রাজনীতি মানুষের জন্যই করি।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় ধাপের ভোটে বিএনপির যে ২৬ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন, তার মধ্যে ১০ জন দলের সাবেক নেতা। এ ছাড়া নয়জন প্রার্থী রয়েছেন, যাঁরা বর্তমানে উপজেলাসহ স্থানীয় পর্যায়ের কোনো না কোনো কমিটিতে আছেন। এর বাইরে তিনজন প্রার্থী আছেন, তাঁরা কমিটিতে নেই। তবে এলাকায় বিএনপির সমর্থক হিসেবে পরিচিত। তাঁরা হলেন ভোলার তজুমদ্দিনে মো. রেজাউল করিম, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে জাহিরুল ইসলাম ও সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় আরিফুল ইসলাম।
দলীয় প্রতীক না থাকলেও নির্বাচনটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে। নির্বাচন ঘিরে মারামারি হবে না, মামলা হবে না, তা কেউ হলফ করে বলতে পারবে না। তাই ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসবে, ততই কর্মীরা (বিএনপির) সরে যাবেন।গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য
বিএনপির পদধারী যেসব নেতা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন, তাঁরা হলেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরকার জহিরুল হক, কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম ফরিদুল হক, নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. তোফাজ্জল হোসেন, টাঙ্গাইল সদরে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজগর আলী, দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে উপজেলা বিএনপির সদস্য মোকাররম হোসেন, হবিগঞ্জ সদরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মহিবুল ইসলাম, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় উপজেলা বিএনপির সদস্য মো. সোহরাব হোসেন, গঙ্গাচড়া উপজেলায় বিএনপির সদস্য শাহ মো. আলমগীর ও কয়রায় উপজেলা বিএনপির সদস্য শেখ আবদুর রশিদ।
সাবেক নেতাদের মধ্যে প্রার্থী হয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সমবায় বিষয়ক সম্পাদক সুকুমার রায়, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. আশ্রাফ আলী হাওলাদার, ভোলার লালমোহনে উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আকতারুজ্জামান, ময়মনসিংহের ত্রিশালে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, চৌহালীতে উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মাহফুজা খানম, নাগরপুরে সাবেক বিএনপি নেতা ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ, সিলেটের বিয়ানীবাজারে উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. জাকির হোসেন, নওগাঁর আত্রাইয়ে উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি একরামুল বারী।
এ ছাড়া আশুগঞ্জে বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হলে দল তাঁকে বহিষ্কার করে।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় প্রথম ধাপের ৭২ জনকে ইতিমধ্যে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এরপর দ্বিতীয় ধাপে ৬১ জন প্রার্থীর তালিকা করে তাঁদের কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা না দিলে তাঁদের শিগগির বহিষ্কার করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এরপর তৃতীয় ধাপে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
হিসাবে দেখা যাচ্ছে, তিন ধাপে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির নেতাদের মধ্যে প্রার্থী ৭৯ জন। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২৮ জন, দ্বিতীয় ধাপে ২৫ জন। তৃতীয় ধাপে এই পদে ২৬ জনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা স্থানীয়ভাবে মোটামুটি প্রভাবশালী এবং সাংগঠনিকভাবেও শক্তিশালী। তাঁদের একের পর এক তালিকা ধরে গণহারে বহিষ্কার দলকে মাঠপর্যায়ে দুর্বল করতে পারে।
যদিও এ ব্যাপারে দলটির নেতৃত্ব কঠোর অবস্থানেই রয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে তাঁদের বহিষ্কার করা ছাড়া বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে কিছু নেতাকে বহিষ্কারের ফলে সাংগঠনিক ভিত্তি কিছুটা দুর্বল হতে পারে, যা দলকে উপেক্ষা করতে হচ্ছে সচেতনভাবে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পর্যবেক্ষণ একটু ভিন্ন। তিনি আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় প্রতীক না থাকলেও নির্বাচনটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে। নির্বাচন ঘিরে মারামারি হবে না, মামলা হবে না, তা কেউ হলফ করে বলতে পারবে না। তাই ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসবে, ততই কর্মীরা (বিএনপির) সরে যাবেন।