আরপিও অধ্যাদেশের খসড়ায় পরিবর্তন আনতে চিঠি দেবে বিএনপি: সালাহউদ্দিন

রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। ২৪ অক্টোবরছবি: প্রথম আলো

নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও (সংশোধন) অধ্যাদেশের যে খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন হয়েছে, তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিএনপির। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, এই খসড়ায় পরিবর্তন আনতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে তারা চিঠি দেবে।

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।

কোনো দল জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও নিজেদের প্রতীকে অংশ নিতে হবে। এমন বিধান যুক্ত করে নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া গতকাল বৃহস্পতিবার অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারসংক্রান্ত বিষয়গুলোর অনেকগুলোতে আমরা সবাই সম্মত হয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি ও আরপিওর যে খসড়াটা উত্থাপন করা হয়েছে, এটাতে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, তাতে বিএনপির কোনো সম্মতি ছিল না।’

জোটবদ্ধ নির্বাচনে নিজস্ব দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হলে ছোট রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হতে উৎসাহিত হবে না বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘এটাতে তাদেরও (ছোট রাজনৈতিক দলগুলোরও) সম্মতি নেই, আমাদেরও সম্মতি নেই। এটা নির্বাচন কমিশন থেকে একতরফাভাবে কেন উত্থাপন করা হলো জানি না। আরপিওর অধ্যাদেশের খসড়ার ওপরে মতামত চেয়েছিলেন। আমরা মতামত জানিয়েছিলাম।’

আরও পড়ুন

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক ফোরামের এই নেতা বলেন, ‘অধ্যাদেশের জন্য যেসব সংশোধনী এসেছে, তার অধিকাংশের সাথে আমরা একমত। কিন্তু প্রতীকের (নিজস্ব প্রতীকের বাইরে জোটের প্রতীক নিতে পারবে না) এ বিষয়ে আমরা সম্মত হইনি কখনো। আমার মনে হয় আমাদের একটা সুষ্ঠু রাজনীতির স্বার্থে, নির্বাচনের স্বার্থে এটা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। এ কথা আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে জানিয়েছি, আমরা হয়তো আনুষ্ঠানিক চিঠিও দেব নির্বাচন কমিশনে এবং আইন উপদেষ্টার কাছে।’

উল্লেখ্য, অনুমোদিত খসড়ায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকেও যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের মতো ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তিন বাহিনীকে নির্বাচনী দায়িত্ব দিতে আলাদা কোনো আদেশের প্রয়োজন হবে না।

আরও পড়ুন

এ ছাড়া পলাতক আসামিদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না রাখা, প্রার্থীদের দেশে-বিদেশে থাকা সম্পদের বিবরণী দেওয়া বাধ্যতামূলক করা, কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা রাখা, ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার–সম্পর্কিত বিধান বিলুপ্ত, ৫০ হাজার টাকার বেশি চাঁদা বা অনুদান ব্যাংকে লেনদেনসহ আরও কিছু সংশোধনী রয়েছে অনুমোদিত খসড়ায়।

হলফনামায় বিদেশে সম্পদের উল্লেখ করা, সশস্ত্র বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা, আদালত ঘোষিত পলাতক আসামিকে নির্বাচনের অযোগ্য করা, ৫০ হাজার টাকার বেশি চাঁদা বা অনুদান ব্যাংকে লেনদেনের বিষয়ে বিএনপির আপত্তি নেই। এসবে দ্বিমত নেই জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিরও।

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ লক্ষ্যে আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। এর আগে নির্বাচনসংক্রান্ত আইনে বড় রকমের পরিবর্তন আনছে সরকার।