বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হচ্ছে: বজলুর রশীদ

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশ করে। আজ শুক্রবার বিকেলেছবি: প্রথম আলো

বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আগামী নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।

আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে বজলুর রশীদ ফিরোজ এ কথা বলেন।

সমাবেশের ব্যানারে লেখা ছিল—গণতন্ত্রে উত্তরণে বাধা সৃষ্টি ও নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত প্রতিহত করো; ওসমান হাদি, দীপু দাস, আয়েশাসহ সব রাজনৈতিক হত্যার বিচার করো এবং খুন, মব সন্ত্রাস, সংবাদপত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর হামলা এবং উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অপতৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও।

সমাবেশে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, নির্বাচন পিছিয়ে গেলে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ বাড়বে। তাঁরা এক নম্বর উপকারভোগী হবেন। এ ছাড়া কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও তাদের সমর্থক যাঁরা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ উচ্চ পদগুলোতে আছেন, তাঁরাও উপকারভোগী হবেন। নির্বাচন হলে তাঁদের সুযোগ–সুবিধা কমে যাবে। সে কারণে হট্টগোল ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। বাংলাদেশকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ফেসবুক–ইউটিউবে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার পত্রিকাসহ সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ও উদীচীর কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এমনিভাবে সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় হামলা করা হচ্ছে। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে নীরব এবং রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে। যারা মূল পরিকল্পনাকারী, ইন্ধনদাতা তাদের এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

যারা ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে মব সন্ত্রাস করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছিল, সেই মহল ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাকশ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করেছে উল্লেখ করে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ ঘটনার পরও প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। দীপু দাসের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচার এবং তাঁর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

বজলুর রশীদ ফিরোজ আরও বলেন, লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের বাড়িতে তালা দিয়ে আগুন লাগিয়ে সাত বছরের শিশুকন্যা আয়েশাকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। গতকাল তাঁর আরেক মেয়ে সালমা আক্তারও হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছে। খুলনায় শ্রমিকনেতাকে গুলি করা হয়েছে। এ ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনা একের পর এক ঘটছে। দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। অভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশের মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চায়। কিন্তু নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, মানুষের মধ্যে শঙ্কা তত বাড়ছে। খুনোখুনি, মারামারি, হামলা আরও ঘটার শঙ্কা আছে।

দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথে অবিচল আছে, অবিচল থাকবে উল্লেখ করে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, সাম্প্রদায়িকতাকে মোকাবিলা করে দেশের মানুষ গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখবে। যারা অগণতান্ত্রিক শাসনের মধ্যে দেশকে নিমজ্জিত করতে চায়, মানুষ তা প্রতিহত করে দেবে।

বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন বলেন, ওসমান হাদিকে যেভাবে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, তার রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে হবে। হাদিকে হত্যার মধ্য দিয়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে, এগুলো হঠাৎ করে শোকার্ত হয়ে ঘটানো হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে উসকানি দেওয়া হচ্ছিল। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট, উদীচীতে আগুন দেওয়া হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক ধারাকে নির্মূল করার চেষ্টা থেকে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্টভুক্ত বাম দলগুলোর কার্যালয়কে টার্গেট করা হচ্ছে উল্লেখ করে মুশতাক হোসেন বলেন, এসব দলের সঙ্গে নাগরিক সমাজের যেসব নেতা আছেন, তাঁদের ছবি দিয়ে পোস্টার টাঙিয়ে হামলাযোগ্য করা হচ্ছে। কারও কারও নামে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আপ্যায়ন (হামলা) করার কথা বলা হচ্ছে। তাদের লক্ষ্য শুধু নির্বাচন বানচাল করা নয়।

সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধ্বংস করার পুরোনো ষড়যন্ত্র চলছে। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশকে পেছনে নিয়ে যেতে চায়।

সমাবেশে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে পুরানা পল্টন, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম হয়ে আবার পল্টনে এসে শেষ হয়।