গণপরিষদ নির্বাচন করে সংবিধান পুনর্লিখনের দাবি এনসিপির

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের ১২তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন। রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতেছবি: দীপু মালাকার

গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন এবং নতুন করে সংবিধান লেখার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের ১২তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের কাছে দলের এ অবস্থান তুলে ধরেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন।

আজকের বৈঠকে জরুরি অবস্থা জারি, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ও জরুরি অবস্থা জারি নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায় রাজনৈতিক দলগুলো।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘আমরা তো বলেছি, আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে আমরা গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন চাই, নতুন করে সংবিধান লিখতে চাই। তো সে ক্ষেত্রে কমিশনের পক্ষ থেকে আমাদের ছয়টি অপশন দেওয়া আছে। কীভাবে এই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হবে, সেই বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। সব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর আমরা সেই বিষয়ে আলোচনা করব। তখন আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

আলোচনায় সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদে জরুরি অবস্থা জারির প্রক্রিয়ায় তিনটি পর্যায় প্রস্তাব করে এনসিপি—যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মহামারি এবং অভ্যন্তরীণ গোলযোগের পরিবর্তে সার্বভৌমত্ব বা ভৌগোলিক অখণ্ডতার হুমকি। এই কাঠামোতে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের ভিত্তিতে জরুরি অবস্থা জারি করতে হবে। এনসিপি এ প্রক্রিয়ায় একমত হয়েছে। জরুরি অবস্থার সময় বিরোধীদলীয় নেতার উপস্থিতি ও মতামতের গুরুত্ব তুলে ধরে রাসিন বলেন, ‘বিরোধী দলের নেতা মন্ত্রিসভার বৈঠকে মতামত দিতে পারবেন, একমত না হলে সেটি সরকারের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। এটাই রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনার দ্বার খুলে দেয়।’

প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়েও এনসিপি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। রাসিন বলেন, ‘আমরা চাই আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারপতিকেই প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক। যদিও কমিশনের আলোচনায় একজন নয়, দুজন প্রবীণতমের মধ্য থেকে বাছাই করার মতো মত এসেছে।’ তিনি জানান, যদি কোনো দল ইশতেহারে ভিন্ন অবস্থান নেয় এবং নির্বাচনে জয়ী হয়, তবে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তারা সেই বিধান যুক্ত করতে পারবে।

রাসিন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি ঐকমত্য তৈরি হচ্ছে। আলোচনা এখন একটি ভালো দিকে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, খুব শিগগির একটি গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক কাঠামোতে পৌঁছানো যাবে।’

আজকের আলোচনায় এনসিপি ছাড়াও বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দার।