নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না: মির্জা ফখরুল

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে শ্রমিক-কর্মচারী সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শুক্রবার বিকেলে নয়াপল্টনে
ছবি : তানভীর আহাম্মেদ

সরকার আবার ‘নির্বাচন নির্বাচন খেলা’ শুরু করেছে অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কোনো নির্বাচন এ দেশে হবে না, যদি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না হয়। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে এই শ্রমিক-কর্মচারী সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়। বক্তব্যে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোট দিতে না পারার অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘এখন আবার নির্বাচন আসছে, সেই নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার আবার নির্বাচন নির্বাচন খেলা শুরু করেছে। আমাদের প্রয়োজন একটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন; প্রয়োজন একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা।’

গোটা জাতি আজকে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কোনো নির্বাচন এ দেশে হবে না, যদি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না হয়।’ সে জন্য সংসদ বিলুপ্ত, আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন করতে হবে। এ ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমাবেশে এভাবে হাতে হারিকেন ও খালি পাত্র নিয়ে যান শ্রমিক-কর্মচারীরা। আজ শুক্রবার বিকেলে নয়াপল্টনে
ছবি : তানভীর আহাম্মেদ

আওয়ামী লীগ জোর করে ১৪ বছর ক্ষমতা দখল করে অত্যন্ত সচেতনভাবে সাধারণ মানুষের অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আজকে শ্রমিক ভাইয়েরা আপনারা এখানে সমবেত হয়েছেন, আপনাদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, শ্রমিকদের কাজের সংস্থান নেই। অথচ এই সরকারের সঙ্গে যারা আছে, তারা লুটতরাজ করে টাকা পাচার করে দিচ্ছে।’

‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ স্লোগান ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করাসহ একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে শ্রমিক-কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান ও আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, কামরুজ্জামান রতন, মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম, শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ, মোস্তাফিজুল করিম, মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে একটি মিছিল নাইটিঙ্গেল মোড়, কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর, মালিবাগ হয়ে মগবাজার মোড় ঘুরে আবার একই পথে নয়াপল্টনে এসে শেষ হয়। বৃষ্টির মধ্যেও কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ব্যানার-ফেস্টুন হাতে মিছিলে অংশ নেন।

রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয়বাদী শ্রমিক দলের সমাবেশে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের একাংশ। নয়াপল্টনে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

‘দেশটাকে আবার মুক্ত করতে হবে’

এর আগে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন ও কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। সেখানে তিনি বলেন, দেশটাকে আবার মুক্ত করতে হবে।

শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তোমরা পড়াশোনা করতে পারো না বিদ্যুৎ থাকে না বলে। স্কুল বন্ধ করে দিতে হয়েছে। মায়েরা চাল, ডাল, লবণের হিসাব করতে গিয়ে খুব কষ্ট পান। সাধারণ মায়েরা বাচ্চাদের ঠিকমতো খাবার দিতে পারেন না। আজকে যারা দেশ শাসন করছে, তারা এই অবস্থা তৈরি করেছে। আমরা এখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি।’

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য এবং স্বরচিত কবিতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা কমিটির আহ্বায়ক সেলিমা রহমান। আরও বক্তব্য দেন সাংবাদিক ও কবি আবদুল হাই শিকদার।