জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র
সর্বদলীয় বৈঠকে আমন্ত্রণ পায়নি ১২–দলীয় জোট, ১৬ বছরের আন্দোলনের স্বীকৃতি চায় তারা
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রে শুধু ৩৬ দিনের নয়, বিগত ১৬ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ত্যাগের স্বীকৃতি দাবি জানিয়েছে ১২-দলীয় জোট। একই সঙ্গে গণ-অভ্যুত্থানের ‘প্রোক্লেমেশন’ নয়, গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে একটা ‘ডিক্লারেশন’ বা ‘ঘোষণা’ আসতে পারে বলেও মনে করে তারা।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জোটের পক্ষে এসব দাবি তুলে ধরেন ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আজকের সর্বদলীয় বৈঠকের ব্যাপারে ১২-দলীয় জোট কোনো বার্তা পায়নি। আন্দোলনের অনেক অংশীজনও আজকের সর্বদলীয় বৈঠকে আমন্ত্রিত হয়নি। যেহেতু বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ, আমরা আশা করেছিলাম সরকার আন্দোলনের সব অংশীজনকে সম্মান প্রদর্শনপূর্বক আমন্ত্রণ জানাবেন। এ ক্ষেত্রে আমার চরম আশাহত হয়েছি।’
এহসানুল হুদা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল। তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়। হঠাৎ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি কেন সামনে আনা হলো, এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকার তখন এ উদ্যোগের সঙ্গে সরকার সম্পৃক্ত নয় বলে জানানো হয়। তবে ৩০ ডিসেম্বর রাতে জরুরি ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এহসানুল হুদা বলেন, ‘১২-দলীয় জোটসহ বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা মনে করি, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের প্রোক্লেমেশন নয়, এটা নিয়ে একটা ডিক্লারেশন বা ঘোষণা আসতে পারে।’
ঘোষণাপত্র নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে ১২-দলীয় জোটের এই সমন্বয়ক আরও বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে ধূম্রজাল ও অস্পষ্টতা সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল এই অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। যারা দীর্ঘ ১৬ বছর যাবৎ ফ্যাসিবাদী শক্তি অপসারণের জন্য মরণপণ আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলাম, তাদের প্রতি উপেক্ষা ও উদাসীনতা প্রদর্শন করা হচ্ছে।’
আরেক প্রশ্নের উত্তরে জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ৩৬ দিনের আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়নি। গত ১৫ বছরের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এই গণ-অভ্যুত্থান সফল হয়েছে। তাই সরকারকে ঐক্য সুদৃঢ় রাখতে হলে আরও সতর্ক থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ১২-দলীয় জোটপ্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আব্দুল করিম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি এম এ মান্নান, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যান ফিরোজ মো. লিটন, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব তমিজউদ্দীন, বাংলাদেশ জাতীয় দলের শামসুল আহাদ, লেবার পার্টির মহাসচিব আমিনুল ইসলাম, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আবু হানিফ, নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির মহাসচিব ইমরুল কায়েস, যুব জাগপার সভাপতি নজরুল ইসলাম প্রমুখ।