কর্নেল তাহেরকে হুকুমের আসামি করায় প্রকৃত খুনিরা সুবিধা পাবে: জাসদ

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) বলেছে, শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রম হত্যার ৪৭ বছর পর দায়ের করা মামলায় লে. কর্নেল আবু তাহেরের (অব.) নাম যুক্ত করার ফলে প্রকৃত ঘটনা, তথ্য ও সত্য আড়াল হবে বলে মনে করে তারা। আজ শুক্রবার জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়।  

বিবৃতিতে বলা হয়, কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা, কর্নেল এ টি এম হায়দার ও ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় যে কয়জন অফিসারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁরা সবাই অফিসার ছিলেন; তাঁরা কেউই এনসিও বা জেসিও ছিলেন না। তাঁরা কেউই তৎকালে সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল তাহেরের কমান্ডে ছিলেন না। তারা কর্নেল তাহের বা জাসদের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন না। তাঁরা সবাই প্রকাশ্যে জিয়ার একান্ত অনুসারী ছিলেন। এসব তথ্য ও সত্য উদ্‌ঘাটিত, উন্মোচিত, প্রকাশিত হওয়ার পরও এ মামলায় কর্নেল তাহেরকে হুকুমের আসামি হিসাবে উল্লেখ করা বোকামি। কর্নেল তাহেরের নাম মামলায় যুক্ত করার ফলে প্রকৃত ঘটনা, তথ্য ও সত্য আড়াল হবে, প্রকৃত খুনিরা সুবিধা পাবে।

উল্লেখ্য ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে গুলি চালিয়ে নাজমুল হুদাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার ৪৭ বছর পর গত বুধবার রাতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন নাজমুল হুদার মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজহার খান। মামলায় মেজর (অব.) আবদুল জলিলকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং জাসদ নেতা লে. কর্নেল আবু তাহেরকে (অব.) হুকুমের আসামি করা হয়েছে।

মামলায় নাহিদ ইজহার খান লিখেছেন, ১৯৭৫ সালে তখনকার সেনাবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং জাসদ নেতা লে. কর্নেল আবু তাহেরের (অব.) নির্দেশে দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা, জেসিও ও সৈনিকেরা সংঘবদ্ধভাবে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটান।

৭ নভেম্বরের ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা দায়েরকে স্বাগত জানিয়ে জাসদের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবার বঙ্গবন্ধু হত্যা, ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা, ৭ নভেম্বর হুদা-হায়দার-খালেদ হত্যাকাণ্ড, ৭ নভেম্বর–পরবর্তী সশস্ত্র বাহিনীর অভ্যন্তরে উচ্ছৃঙ্খল অফিসারদের দ্বারা সংঘটিত সব হত্যা-খুন-গুমের ঘটনার তদন্ত ও বিচার হওয়া জরুরি। কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদার মেয়ে নাহিদ ইজহার খান যে মামলা করেছেন, সে মামলায় তাঁর বাবাসহ তিনজন অফিসারের হত্যাকারী হিসেবে মেজর আবদুল জলিল, মেজর আসাদ উজ্জামান, কর্নেল সিরাজ, মেজর মুক্তাদিরের নাম উল্লেখ করেছেন। উল্লিখিত চারজনই অফিসার, তাঁরা জেসিও বা এনসিও নন। তাঁরা কেউই তৎকালে সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল তাহেরের অধীন কোনো কমান্ডে ছিলেন না।’

জাসদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সেনাবাহিনীর আলোচ্য টু ফিল্ড আর্টিলারি কখনোই কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে, কর্তৃত্বে বা দখলে ছিল না। সিপাহিরা বিদ্রোহ করেন ৬ নভেম্বর দিবাগত রাতে, অর্থাৎ ৭ নভেম্বর প্রথম প্রহরে রাত একটায়। বিদ্রোহ সংঘটিত করার পর বিদ্রোহী সিপাহি কর্নেল তাহেরকে ক্যান্টনমেন্টে টু ফিল্ড আর্টিলারি হেড কোয়ার্টারে নিয়ে যান। কর্নেল তাহের সেখানে রাত ৩টা ৩০ পর্যন্ত অবস্থান করেন এবং বন্দিদশা থেকে মুক্ত জিয়াকে পরদিন সকালে শহীদ মিনারে গিয়ে বিদ্রোহী সিপাহিদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ক্যান্টনমেন্ট ত্যাগ করে এলিফ্যান্ট রোডে নিজ বাসভবনে চলে আসেন। ৭ নভেম্বর সকালে যখন হুদা-হায়দার-খালেদকে হত্যা করা হয়, টু ফিল্ড আর্টিলারি তখন জিয়া ও মীর শওকতের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বে তাঁদেরই অনুসারীদের দখলে ছিল।