সেমিনারে দলটির নেতারা
গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে চায় বিএনপি
একটি অবাধ, মুক্ত, উদার, গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় (ইন্দো-প্যাসিফিক) অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় বিএনপি কাজ করতে চায় বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ ও ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল’ শিরোনামে আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে এ কথা বলেন তাঁরা।
বিএনপি আয়োজিত ওই সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা, জাপান, নেদারল্যান্ডস, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের সঞ্চালনায় সেমিনারে মির্জা ফখরুল ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক শাহিদুজ্জামান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ও গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, এ সময়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা অনেক চ্যালেঞ্জের। এই চ্যালেঞ্জ উত্তরণের জন্য সমমনা দেশগুলোকে একই ফ্রেমওয়ার্কের (রূপরেখা) ভাবনা নিয়ে এগোতে হবে। ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় (ইন্দো-প্যাসিফিক) অঞ্চলে বিএনপি মিত্র হিসেবে কাজ করতে চায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বর্তমান সময়টা জাতির জন্য সবচেয়ে সংকটময় বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। প্রতিহিংসার কারণে শাসকগোষ্ঠী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিনা চিকিৎসায় মুমূর্ষু অবস্থায় রেখেছে বলেও দাবি করেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে প্রায় ৭০০ ব্যক্তিকে গুম করা হয়েছে। ৪৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, বিরোধী কেউ যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, সেই নির্বাচনী পরিকল্পনা সরকার তৈরি করেছে। তার অংশ হিসেবে বিএনপি নেতা–কর্মীদের ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত করা হচ্ছে, যাতে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন। সব রাজনৈতিক দল এখন সরকারের পদত্যাগ চাইছে, মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই দাবি আদায়ে সক্ষম হবেন বলে তিনি আশাবাদী।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তাতে তিনি অভিযোগ করেন, গত ১৭ বছরে কর্তৃত্ববাদী সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যায়ের শিকার হয়েছে বিএনপি। আমির খসরুও বলেন, বিএনপি জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চল নিশ্চিত করতে চায়। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলোর যথাযথ সংরক্ষণই ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশলের ভিত্তি পাকা করবে বলে তাঁরা বিশ্বাস করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোকে উৎপাদনমুখী ভাবনা নিয়ে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হবে। দেশগুলোকে একে অপরের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। পাশাপাশি কোনো দেশের এমন কোনো গোপন অ্যাজেন্ডা থাকা যাবে না, যা অন্য দেশের ক্ষতি করে।
‘যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ’
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে ভূমিকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী। তিনি বলেন, বিএনপি এখন গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করছে। তবে এই যুদ্ধ শুধু বিএনপির জন্য নয়, এটা এ দেশের জনগণেরও যুদ্ধ। দেশে মানুষের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার নেই। বাংলাদেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে কাজ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের কাছ থেকে সহায়তা প্রয়োজন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক শাহিদুজ্জামান বলেন, এ পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে বিএনপি বা যে দল বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসবে, তাদের নিশ্চিত করতে হবে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হবে। কারণ, এ অঞ্চল চীনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর প্রশ্ন তুলে বলেন, ভারত বাংলাদেশের বন্ধু কিন্তু তারা বাংলাদেশে কেন একটি দলকে সমর্থন দেয়? চীন ও রাশিয়া কমিউনিস্ট দেশ এবং স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেন এই বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সমস্যাগুলো একমাত্র গণতান্ত্রিক দেশগুলোই বুঝতে পারবে। বাংলাদেশ এখন স্বৈরাচারী সরকার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বড় ব্যক্তি, বড় গণতান্ত্রিক দেশের মানুষ, তিনি বুঝতে পারবেন।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় গত ১৫ বছরে বিএনপি যেসব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে, কোনো দল তার মধ্য দিয়ে যায়নি। দেশটি এক দলের দেশ হয়ে গেছে। ওই সব শক্তিকে ধন্যবাদ, যারা এই জটিল সময়ে এগিয়ে এসেছে।