ঢাকা-১৬ আসনে চলাচলের পথ আটকে নির্বাচনী ক্যাম্প
ঢাকা উত্তর সিটির চারটি ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা–১৬ আসন গঠিত।
এই সংসদীয় আসনে ভোটার সংখ্যা প্রায় চার লাখ।
বিধি ভঙ্গ করে এখানে বেলা ২টার আগে মাইকিং শুরু হয়।
ফুটপাত ও সড়কের জায়গায় মানুষের চলাচলের পথ সংকুচিত করে ঢাকা–১৬ সংসদীয় আসনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে শুধু একটি ওয়ার্ডেই ১২টি নির্বাচনী ক্যাম্প (কার্যালয়) করা হয়েছে। অথচ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন এলাকায় কোনো ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী কোনোভাবেই একটির বেশি নির্বাচনী কার্যালয় (ক্যাম্প) করতে পারেন না। একইভাবে বিধিতে বলা আছে, কোনো সড়কে কিংবা জনগণের ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত স্থানে কোনো প্রার্থী নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবেন না।
ঢাকা–১৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্। তিনি এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। আসনটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের চারটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে ২, ৩, ৫ ও ৬। এই আসনে ভোটার সংখ্যা প্রায় চার লাখ। গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই আসনের এই তিনটি ওয়ার্ডের (২, ৫ ও ৬) বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছেন প্রথম আলোর একজন প্রতিবেদক ও একজন আলোকচিত্রী। এই তিন ওয়ার্ডেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে বিধি ভঙ্গ করে মোট ১৯টি নির্বাচনী ক্যাম্প করা হয়েছে।
আচরণবিধি না মেনে একটি ওয়ার্ডেই নৌকার প্রার্থীর পক্ষে করা হয়েছে ১২টি নির্বাচনী ক্যাম্প। এর ১১টিই ফুটপাত ও সড়কের জায়গায়।
এক ওয়ার্ডেই নৌকার ১২টি ক্যাম্প
ঢাকা–১৬ আসনের আওতাধীন উত্তর সিটির ৬ নম্বর ওয়ার্ডেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে ১২টি নির্বাচনী ক্যাম্প করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১টিই সড়ক ও ফুটপাতের জায়গা দখল করে করা।
এই ওয়ার্ডের আওতাধীন মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বি ও সি ব্লকের মাঝখানের সড়কে মাত্র ৩০০ মিটারের মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাপড় ও বাঁশ দিয়ে তিনটি নির্বাচনী ক্যাম্প করা হয়েছে। এর সব কটিই ক্যাম্প সড়ক ও ফুটপাতের জায়গায়। একটি ক্যাম্পে কথা হয় নৌকার প্রার্থীর কর্মী মো. মিন্টুর সঙ্গে। তিনি বলেন, এখন তিনটি থাকলেও পরে দুটি ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়া হবে।
একই ওয়ার্ডের মিল্ক ভিটার সড়কে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে আরও তিনটি ক্যাম্প করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি সড়ক ও ফুটপাতের জায়গায়। বাঁশ ও কাপড় দিয়ে তৈরি এসব ক্যাম্পে চেয়ার ও টেবিল বিছিয়ে রাখা হয়েছে।
মিরপুর ৭ নম্বর সেকশনের আরামবাগ আবাসিক এলাকার প্রধান সড়কের দুই পাশে চারটি ক্যাম্প করা হয়েছে। একই সেকশনের ৪ নম্বর সড়কে আরও দুটি ক্যাম্প রয়েছে। গতকাল দুপুরে সাড়ে ১২টার দিকে মোটরসাইকেলে করে এই ছয় ক্যাম্পও একে একে ঘুরে দেখেন এই প্রতিবেদক। তখন এসব ক্যাম্পের কোনোটিতেই নেতা–কর্মী কারও দেখা পাওয়া যায়নি।
এই ১২ নির্বাচনী ক্যাম্পের বাইরে ঢাকা উত্তর সিটির ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সড়ক ও ফুটপাতের জায়গায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ৪টি ক্যাম্প দেখা যায়। এর মধ্যে মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের এ ব্লকে দুটি, ত ব্লকে একটি ও বি ব্লকে আরেকটি ক্যাম্প রয়েছে। এ ব্লকের একটি নির্বাচনী ক্যাম্পের ব্যানারের নিচে লেখা, ‘সৌজন্যে: ইসমাইল হোসেন বেনু। সাবেক কমিশনার (১৯৮৮–২০১১), ২ নং ওয়ার্ড, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন।’
এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে আরও তিনটি নির্বাচনী ক্যাম্প দেখা গেছে।
সড়ক ও ফুটপাতের জায়গায় নির্বাচনী ক্যাম্প করার বিষয়ে ঢাকা-১৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্র বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো। গতকাল রাতে তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। পরে তাঁর নির্বাচনী সমন্বয়ক (গণমাধ্যম) মানিক হোসেনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তিনি বলেন, ‘চারটি ওয়ার্ডের জন্য চারটি নির্বাচনী ক্যাম্পের একটি তালিকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আমাদের কোনো ক্যাম্প নেই। অতি উৎসাহী হয়ে কিছু ব্যক্তি বিভিন্ন জায়গায় নৌকার পক্ষে ক্যাম্প করেছেন, যার দায়দায়িত্ব আমরা নেব না।’
সকাল থেকেই মাইকিং
ঢাকা-১৬ আসনে সড়ক ও ফুটপাতের জায়গায় ক্যাম্প করেই যে আচরণবিধি ভঙ্গ করা হচ্ছে, বিষয়টি এমন নয়। এই আসনে সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাইকিং করে ভোট চাওয়া হচ্ছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিরপুর ৭ নম্বর সেকশনের চলন্তিকা মোড়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে মাইকিং করা হচ্ছিল। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের নান্নু মার্কেট এলাকা লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষে রিকশায় করে প্রচারকর্মীরা মাইকিং করছিলেন। যদিও নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, বেলা ২টার আগে এবং রাত ৮টার পরে মাইকিং করার সুযোগ নেই।
এই আসনে ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্ ছাড়া অন্য প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির মো. আমানত হোসেন (লাঙ্গল), বিএনএফের মো. সজীব কায়সার (টেলিভিশন), জাকের পার্টির আমিনুল ইসলাম (গোলাপ ফুল), এনপিপির তারিকুল ইসলাম (আম) ও বিএসপির মো. তৌহিদুল ইসলাম (একতারা)। নৌকার বাইরে এলাকায় লাঙ্গলের কিছু পোস্টার, ব্যানার ও নির্বাচনী ক্যাম্প রয়েছে। অন্যদের প্রচার নামেমাত্র।
আচরণবিধি ভঙ্গের ক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা জানতে চাইলে ঢাকা–১৬ সংসদীয় আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান মাঠে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
পরে ঢাকা–১৬ আসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জালাল উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে তাঁরা প্রার্থীর পক্ষের লোকদের ফুটপাত ও সড়ক থেকে নির্বাচনী ক্যাম্প সরিয়ে নিতে বলেছেন। এসব ক্যাম্প সরানো হয়েছে কি না, তা রোববার (আজ) আবার সরেজমিনে গিয়ে দেখবেন।