উচ্চকক্ষে পিআর মানবে না বিএনপি

বিএনপির লোগো

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষের আসন নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি (পিআর) চালুর বিষয়ে অন্য দলগুলোর সঙ্গে একমত হবে না বিএনপি। বিষয়টি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে রাজনৈতিকভাবে তা মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিন অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্যসহ আরও কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে সেগুলো চূড়ান্ত হয়নি।

বিএনপির নেতারা বলছেন, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন সবাই চায়। কিন্তু এর নির্বাচনপদ্ধতি এবং এর দায়িত্ব ও এখতিয়ার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য আছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব হলো, ভোটের অনুপাতের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠন হবে। অবশ্য সংসদের উচ্চকক্ষ, নিম্নকক্ষ ও সংরক্ষিত নারী আসন—সবক্ষেত্রেই পিআর পদ্ধতি চালুর পক্ষে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ আরও কিছু দল। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) উচ্চকক্ষে পিআরের পক্ষে। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের সংলাপে দীর্ঘ আলোচনা ও পাল্টাপাল্টি যুক্তিতর্ক চললেও ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। বরং উচ্চকক্ষে পিআর নিয়ে বড় ধরনের বিভক্তি তৈরি হয়েছে।

যদিও বিএনপি নিজেও রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের জন্য ৩১ দফা প্রস্তাবে উচ্চকক্ষ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের ৫ নম্বরে বলা হয়েছে, ‘বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সংসদে ‘উচ্চকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা’ প্রবর্তন করা হবে।’

বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতা জানান, বাংলাদেশে কোনো প্রদেশ নেই, তাই অঞ্চলভিত্তিক প্রতিনিধিত্বেরও দরকার হয় না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি একটি নতুন ধারণা। তবু রাষ্ট্রের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নাগরিকদের চিন্তাচেতনা দিয়ে জাতিকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি সংসদে একটি উচ্চকক্ষ করার প্রস্তাব করেছে। তবে এই নেতা এটাও বলেছেন, ‘এখন এটাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ রকম একটা প্রেক্ষাপটে আরেকটা সংসদ (উচ্চকক্ষ) বানানো, এর জন্য ব্যয় বাড়ানো কতটা প্রয়োজন, জনমনে সে প্রশ্ন উঠেছে।’

কথা বলে জানা গেছে, এখনো অনিষ্পন্ন থাকা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলোর বিষয়ে স্থায়ী কমিটিতে আরও আলোচনা হবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সভা হয়। এতে খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অংশ নেন।

সংশোধনী: গতকাল শুক্রবার রাত ১০টা ৪৪ মিনিটে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে সংসদের উচ্চকক্ষ, নিম্নকক্ষ ও সংরক্ষিত নারী আসন—সবক্ষেত্রেই পিআর পদ্ধতি চালুর পক্ষে থাকা দলগুলোর তালিকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। দলটি সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির পক্ষে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত। আজ শনিবার বিকেল চারটায় তথ্যটি সংশোধন করা হলো।