বিশেষ সাক্ষাৎকার: মামুনুল হক

আফগানিস্তানে তিনটি বিষয় নজর কেড়েছে, নারী শিক্ষার বিষয় আপত্তিকর

সম্প্রতি আফগানিস্তান যান বাংলাদেশের সাতজন আলেম। তাঁরা হলেন মাওলানা আবদুল হামিদ, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা আবদুল আউয়াল, মাওলানা আবদুল হক, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী, মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমী ও মাওলানা মাহবুবুর রহমান।

আট দিনের সফর শেষে গত বৃহস্পতিবার তাঁরা দেশে ফিরেছেন। তাঁরা কেন, কীভাবে আফগানিস্তান গেলেন, কী দেখলেন—এসব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি সেলিম জাহিদ

প্রথম আলো:

হঠাৎ আফগানিস্তানে কেন গেলেন, কারা নিল?

মামুনুল হক: যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি সংস্থা আছে ‘প্রোস্পার আফগানিস্তান’ নামে। এর অধিকাংশ দায়িত্বশীল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। তাঁরা বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে। বিশেষ করে, বিপদগ্রস্ত মুসলিম বন্দীদের আইনি সহায়তা ও মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হিসেবে আফগানিস্তানকে নিয়ে কাজ করা তাদের বিশেষ আগ্রহ। সেই হিসাবে বিভিন্ন প্রতিনিধিদল নিয়ে তারা আফগানিস্তান ভিজিট করায়। ইতিমধ্যে লন্ডন থেকে ইসলামিক স্কলারদের দুটি প্রতিনিধিদল নিয়ে ভিজিট করিয়েছে। তাদের তৃতীয় প্রজেক্ট ছিল বাংলাদেশ থেকে আলেমদের একটি প্রতিনিধিদল নেওয়া। সেই হিসেবে তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমরা বলেছি, সফরটা যদি যথাযথ ও আইনগতভাবে হয়, সমস্যা যদি না থাকে, যেতে অসুবিধা নেই। তখন তারা আমাদের এখান থেকে ডেলিগেট তৈরি করে ওখানকার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেখানকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়ে প্রসেসিং করে।

ওখানকার একটা নতুন মন্ত্রণালয় তারা করেছে ‘আমর বিল মা’আরুফ, ওয়াননাহয়ি আনিল মুনকার’। এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ। যার অর্থ হলো ‘সৎ কাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজের নিষেধ’বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
প্রথম আলো:

কত দিনের সফর ছিল?

মামুনুল হক: ১৭ সেপ্টেম্বর গেলাম, ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে ফিরলাম। আট দিনের মতো।

প্রথম আলো:

আপনারা কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন, সেখানে কার কার সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে—এগুলো কি পূর্বনির্ধারিত ছিল?

মামুনুল হক: আমাদের আয়োজক সংস্থা হয়তো আগে থেকেই যোগাযোগ করে রাখছে। বিস্তারিত আমাদের সঙ্গে আগে আলোচনা হয়নি। তবে এটা আলোচনা হয়েছে যে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করব।

আমরা সেখানে দেখলাম, নিরেট মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিতরাই সব মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে তারা অসাধারণ অগ্রগতি সাধন করছে। এতে আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিছে।
প্রথম আলো:

কার কার সঙ্গে আপনাদের সাক্ষাৎ হয়েছে? সুনির্দিষ্ট করে নাম বলা যাবে?

আফগানিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের সামনে বাংলাদেশের আলেমদের সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল
ছবি: সংগৃহীত

মামুনুল হক: সেখানকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোল্লা আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে তাঁর মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। তারপর পানি ও বিদ্যুৎ–মন্ত্রী মোল্লা আবদুল লতিফ মনসুর, শ্রম ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী মোল্লা আবদুল মান্নানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারপর ওখানকার একটা নতুন মন্ত্রণালয় তারা করেছে ‘আমর বিল মা’আরুফ, ওয়াননাহয়ি আনিল মুনকার’। এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ। যার অর্থ হলো ‘সৎ কাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজের নিষেধ’বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ওখানকার ডেপুটি মিনিস্টার মৌলভি আলী আহমদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এ ছাড়া আফগানিস্তানের প্রধান বিচারপতি মৌলভি আবদুল হাকিম হাক্কানী, তিনি সেখানকার একজন শীর্ষ আলেম এবং বড় বড় মন্ত্রীর অনেকেরই ওস্তাদ। তাঁর সঙ্গে প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।

এর বাইরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বৈঠকের একটা শিডিউল ছিল। কিন্তু তিনি ব্যক্তিগত ব্যস্ততায় সময় দিতে পারেননি। তাঁর একজন ডেপুটির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তিনিও একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তি। এ ছাড়া আমরা রাজধানী কাবুল থেকে কয়েক শ কিলোমিটার দূরে খোস্ত প্রদেশে গিয়েছিলাম। খোস্ত প্রদেশের গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, তাঁর নামটা এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। ওখানকার আফগান দারুল উলুম ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ বিশ্ববিদ্যালয়সহ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছি।

সেখানে কমপক্ষে ৫ মিলিয়ন (৫০ লাখ) মানুষের হাতে ভারী রকমের অস্ত্র আছে। মানুষের হাতে হাতে অস্ত্র, কিন্তু গত চার বছরে কোনো মারামারি, হানাহানি, রক্তপাতের ঘটনা নেই। ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনা শোনা যায় না।
প্রথম আলো:

সফরের পুরোটাই কি কাবুলকেন্দ্রিক ছিল?

মামুনুল হক: হ্যাঁ। খোস্তের বাইরে বাকি সবই কাবুলকেন্দ্রিক ছিল।

প্রথম আলো:

আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কী বিষয়ে কথা বললেন?

মামুনুল হক: আমরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছি, ওখানে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার কী সুযোগ আছে। যে সুযোগের কথাগুলো সামনে এসেছে, সেখানে আমরা তিনটা বিষয়ে কথা বলছি। প্রথমত, বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ হিসেবে তাদের (আফগানিস্তান) সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছি। তিনি আমাদের জানালেন, ইতিমধ্যে ৪১টি রাষ্ট্রের সঙ্গে তাঁদের ডিপ্লোমেটিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব দেশে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে ডিপ্লোম্যাট নিযুক্ত আছেন এবং তাঁরা কাজ করছেন। উপমহাদেশের মধ্যে ভারতে আছে, পাকিস্তানে আছে, প্রায় সব দেশেই আছে—শুধু বাংলাদেশে নেই। তাঁদের পক্ষ থেকে কোনো ডিপ্লোম্যাট দেয় নাই। তাঁরা আমাদের অনুরোধ করেছেন, আমরা যেন সবার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলি। তাঁরা কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী।

প্রথম আলো:

কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ, আলোচনা হয়েছে?

মামুনুল হক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের বললেন যে ওআইসির অধিবেশনের সময় আমাদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি আমাদের জানান, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁরা ইতিমধ্যে চিঠি পাঠিয়েছেন। তাঁরা আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশে ডিপ্লোম্যাট (কূটনৈতিক) পাঠাতে চান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো জবাব তাঁরা পাননি। কুয়েত ছাড়া গোটা আরব বিশ্বে তাঁদের ডিপ্লোম্যাট আছে। এই উপমহাদেশে বাংলাদেশ বাকি।

প্রথম আলো:

আপনাকে যে দায়িত্ব দিল, আপনি কি সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করবেন?

মামুনুল হক: না, দায়িত্ব তো নয়। তাঁরা আমাদের অনুরোধ করেছেন। আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বলব বিষয়টি।

প্রথম আলো:

আফগান সফরে কোন বিষয়টা আপনাদের আকৃষ্ট করেছে বেশি?

মামুনুল হক: যেহেতু আমরা সবকিছুর ক্ষেত্রে ইসলামকে অনুসরণ করি, সেখানে আমাদের সবচেয়ে আকৃষ্ট করেছে একটা বিষয়। সেটা হলো, আজকের দুনিয়া যেটা মনে করে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিতরা সমাজ-রাষ্ট্র পরিচালনা করতে অক্ষম। আমরা সেখানে দেখলাম, নিরেট মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিতরাই সব মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে তারা অসাধারণ অগ্রগতি সাধন করছে। এতে আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিছে।

প্রথম আলো:

এই সফরের তিনটি উল্লেখযোগ্য দিক বলতে বলা হলে কী বলবেন?

আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজউদ্দিন হাক্কানির ছোট ভাই ও তাঁর একান্ত সহকারী মৌলভি আনাস হাক্কানির সঙ্গে বৈঠক করেন মামুনুল হক
ছবি: সংগৃহীত

মামুনুল হক: তিনটি জিনিস চোখে পড়ার মতো। এক নম্বরে নিরাপত্তা। দুই নম্বরে উন্নয়ন। তিন নম্বরে ন্যায়পরায়ণ বিচারব্যবস্থা। সেখানে কমপক্ষে ৫ মিলিয়ন (৫০ লাখ) মানুষের হাতে ভারী রকমের অস্ত্র আছে। মানুষের হাতে হাতে অস্ত্র, কিন্তু গত চার বছরে কোনো মারামারি, হানাহানি, রক্তপাতের ঘটনা নেই। ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনা শোনা যায় না। তারা অল্প সময়ের মধ্যে একটা দারুণ নিরাপত্তার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
দ্বিতীয় হলো, অর্থনৈতিকভাবে সারা পৃথিবী তাদের অসহযোগিতা করছে। শুধু দুটি সোর্সের ওপর ভিত্তি করে এখন তাদের রাষ্ট্রীয় অর্থব্যবস্থা বা রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে। একটা হলো কাস্টমস। আরেকটি খনিজ সম্পদ। অর্থনীতির এমন অবস্থার মধ্যেও দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে। তারা বলল, আট লাখ পরিবারকে তারা ভাতা দেয় প্রতি মাসে। যারা বিগত যুদ্ধে মারা গেছে, তাদের এতিম এবং বিধবাদের তারা ভাতা দিচ্ছে। ইন্টারেস্টিং তথ্যটা হলো, শুধু পক্ষের লোকজনদের যে ভাতা দেয়, তা নয়; বরং তাদের বিপক্ষে যুদ্ধ করে যেসব মানুষ মারা গেছে, তাদেরও যদি কোনো এতিম বিধবা থেকে থাকে, তাদেরও ভাতা দেওয়া হচ্ছে। তারা যখন চার বছর আগে সরকার গঠন করে, তখন ১ ডলারে পাওয়া যেত ১৩০ আফগানি মুদ্রা। সেটা এখন ৬৮ আফগানি।

বিচারব্যবস্থা কীভাবে পরিচালিত হয়, সেটা জানলাম। তিনটা স্তরে তাদের আদালত। নিম্ন আদালত, আপিল আদালত এবং সর্বোচ্চ আদালত। ১৫ দিনের মধ্যে নিম্ন আদালতের বিচার শেষ করতে হয়। কোনো কারণে সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হলে নিম্ন আদালতকে উচ্চতর আদালতের অনুমতি নিতে হয়। সেখানে মামলা নিষ্পত্তি, মামলা পরিচালনা করার জন্য কোনো উকিল, ব্যারিস্টার বা মধ্যস্থতাকারী কোনো ব্যক্তিত্বের একটা প্রয়োজন হয় না। কেউ চাইলে উকিল নিয়োগ করতে পারে। প্র্যাকটিক্যাল হলো, অধিকাংশ মামলায় কোনো উকিলের মধ্যস্থতা ছাড়া বাদী ও বিবাদী দুজনেই মামলা পেশ করে। ৫০ শতাংশের বেশি মামলা নিষ্পত্তি হয় কোনো উকিল ছাড়া। এই জিনিসটা আমাদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে।

একটা বিষয় আছে আপত্তিকর, সেটা হলো নারী শিক্ষা বা নারীদের শিক্ষার বিষয়ে। এ বিষয়ে আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। তবে নারীদের বিষয়ে বেশ কিছু প্রচারণা আছে। এর সত্যতা পাইনি। সেখানে নারীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করছে, তা দেখেছি।
প্রথম আলো:

কোন জিনিসটা খারাপ লেগেছে?

মামুনুল হক: একটা বিষয় আছে আপত্তিকর, সেটা হলো নারী শিক্ষা বা নারীদের শিক্ষার বিষয়ে। এ বিষয়ে আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। তবে নারীদের বিষয়ে বেশ কিছু প্রচারণা আছে। এর সত্যতা পাইনি। সেখানে নারীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করছে, তা দেখেছি।

প্রথম আলো:

বোরকা ছাড়া?

মামুনুল হক: বোরকা বাধ্যতামূলক না। মুখ ঢাকাও কোনো বাধ্যতামূলক না। তবে সেখানে বিভিন্ন জায়গায় আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য থাকে। যেমন ‘মেহেরবানি করে ইসলামি হিজাব আপনারা ব্যবহার করুন।’ সব নারী করছে, তা-ও না। কেউ পুরোটা করছে, আবার কেউ কিছুটা লঙ্ঘন করছে। মেয়েরা বাজারসদাই করতেছে। আমরা যেখানে হোটেল-রেস্টুরেন্টে খাচ্ছি, সেখানে মেয়েরা আলাদা জায়গায় এক পাশে খাবার খাচ্ছে। রাস্তায় ওরকম দল বেঁধে মেয়েরা কোথাও যাচ্ছে, বাজারঘাট করছে; অনেকে গাড়িও চালাচ্ছে।

প্রথম আলো:

নারী শিক্ষা নিয়ে আপনারা কী বললেন, তারা কী বলল?

মামুনুল হক: শিক্ষা বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। তাদের বক্তব্য হলো, বিগত আগ্রাসনের সময় শিক্ষাব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করে তারা শিক্ষা কারিকুলামকে অনৈসলামিকরণ করেছে ব্যাপকভাবে। এ জন্য তারা নতুন করে একটা শিক্ষা কারিকুলাম ঢেলে সাজাচ্ছে। এটা করতে গিয়ে এবং নারী-পুরুষের সহশিক্ষাকে তারা বাদ দিচ্ছে। নারীদের জন্য পৃথক শিক্ষাব্যবস্থা করছে। বর্তমানে তারা ক্লাস সিক্স পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। সিক্স পর্যন্ত মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে। সিক্সের ওপর থেকে ধর্মীয় শিক্ষা চালু আছে মেয়েদের জন্য। আর ছেলেদের জন্য ধর্মীয় এবং জেনারেল সব ধরনের শিক্ষা আছে। শুধু মেয়েদের উচ্চশিক্ষাটা এখন স্থগিত আছে। এর জন্য তারা কারিকুলাম তৈরি করছে।

প্রথম আলো:

এই যে নারী শিক্ষা নিয়ে আপত্তির কথা বললেন, এটা কি আপনারা বলেছিলেন? কাকে বললেন?

মামুনুল হক: এটা আমরা একেবারে মানে একাধিক মন্ত্রণালয়ে বলেছি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি, প্রধান বিচারপতিকেও আমরা বলেছি। তাঁরা আমাদের আশ্বস্ত করছেন যে মেয়েদের জন্য সর্বোচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত তাঁরা করে দেবেন। তাঁরা খুব দ্রুত কাজ গুছিয়ে আনছেন। অল্প কিছু দিনের মধ্যে আপনারা সুসংবাদ পাবেন।

প্রথম আলো:

আপনাদের এই সফর, সেখানকার মন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ নিয়ে কোনো সংশয়-সন্দেহ আছে বলে মনে করেন?

আফগানিস্তানের বিদ্যুৎ ও পানিমন্ত্রী মোল্লা আবদুল লতিফ মানসুরের সঙ্গে বৈঠকে মামুনুল হকসহ বাংলাদেশের আলেমরা
ছবি: সংগৃহীত

মামুনুল হক: আমরা মনে করি, এটা জুজুর ভয়। এভাবে ভীতসন্ত্রস্ত হওয়ার কিছু নেই এবং এখানে আইনবহির্ভূত কিছু নেই। এই সরকারের সঙ্গে আমেরিকা রাষ্ট্রীয়ভাবে মিটিং করছে, ন্যাটো মিটিং করছে, পশ্চিমা বিশ্বের সবাই মিটিং করছে। বড় রাষ্ট্রগুলো তাদের সঙ্গে মিটিং, চুক্তি ও বোঝাপড়া করতে পারবে; শুধু আমরা গরিব দেশের লোকজন তাদের সঙ্গে মেলামেশা করলে সেটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা—এটা হীনম্মন্যতা।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসা এবং আফগানিস্তানের তালেবানের একটা যোগসূত্রের কথা তো আছে। হয়তো কারও কারও আশঙ্কাটা সে কারণে।

মামুনুল হক: তালেবানি রাষ্ট্রের তো আমাদের এখানে কোনো প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মুসলমান। আপনারা জানেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন বিষয়ে জরিপ চালানো হয়েছিল। সেখানে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ শরিয়াহ শাসন চেয়েছে। দেশের মানুষ তো শরিয়াহ আইন চাইছে। এটাকে কেন জোর করে তালেবানি শাসন বলে শরিয়াহ আইন চাওয়ার গণ–অভিপ্রায়কে গলা টিপে হত্যা করা হবে। এটাকে আমরা খুব খারাপ মনে করি। মুসলমান মাত্রই তার মধ্যে শরিয়াহ আইনে শাসিত হওয়ার একটা অভিপ্রায় আছে। কারণ, মানুষের পূর্ণাঙ্গ অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে শরিয়াহর বিকল্প কোনো ব্যবস্থা পরিপূর্ণ হতে পারে না।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশের ব্যাপারে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ সম্পর্কে তারা কিছু জানত?

মামুনুল হক: হ্যাঁ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (ডেপুটি মিনিস্টার) বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের পর আপনারা ভালো আছেন। এবং সবাই প্রায় জুলাই বিপ্লব সম্পর্কে একটা ধারণা রাখে। এই বিপ্লবটাকে তারা (আফগানিস্তান) পজিটিভভাবে দেখছে। তারা মনে করছে, (বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের) অন্যায় এবং অবিচারের অবসান ঘটেছে। ইসলামপন্থীরা এই বিপ্লবে ভালো ভূমিকা রেখেছে। তাদের ওপর জুলুম-অত্যাচার বেশি হয়েছিল। তারা সেই জুলুম থেকে মুক্তি পেয়েছে।

প্রথম আলো:

আপনাদের টিমের সবাই কি প্রথমবার আফগানিস্তানে গেলেন?

মামুনুল হক: হ্যাঁ। মনে হয় সবাই প্রথম গেছেন।

প্রথম আলো:

সর্বশেষ প্রশ্ন, আফগানিস্তানে যাওয়ার আগে সরকারের কোনো অনুমতি নিয়েছিলেন? বা ফেরার সময় বিমানবন্দরে কোনো প্রশ্নের মুখে পড়েছেন?

মামুনুল হক: আফগানিস্তানে যেতে আইনি কোনো বাধা নেই। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, কিছুদিন আগেও রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশ থেকে ত্রাণ নিয়ে টিম গেছে আফগানিস্তানে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অনেক এনজিও অনেক আগে থেকে সেখানে সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব কারণে সরকারের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি।

আমরা পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে সৌদি আরব থেকে দুবাই হয়ে কাবুল গিয়েছি। ফিরেছি কাবুল থেকে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে। দুবাই থেকে আফগানিস্তানে যাওয়ার জন্য সে দেশের সরকার আমাদের বিশেষ ভিসার ব্যবস্থা করেছে। এর জন্য আমাদের পাসপোর্টে কোনো সিল পড়েনি। সে কারণে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কিছু বলার ছিল না।