বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের জন্য ‘টার্নিং পয়েন্ট’। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই দিন। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতেই ৭ নভেম্বর তাৎপর্যপূর্ণ।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন। এ আলোচনা সভার আয়োজক ছিল বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
মোশাররফ হোসেন বলেন, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালে গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরু হয় লুটপাট ও দুর্নীতির অর্থনীতি। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছিল না। রক্ষী বাহিনী ২০ হাজারের বেশি মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছিল। আওয়ামী লীগের মধ্যেই কেউ গণতন্ত্র চেয়েছে, কেউ চায়নি। তাদের অন্তঃকোন্দলে ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটেছে। কোনটা অপপ্রচার আর কোনটা সত্য, সবাই জানে। আওয়ামী লীগ সরকার জানে, তৎকালীন আওয়ামী লীগের এক পক্ষ অন্য পক্ষকে হটিয়ে আরেকটি আওয়ামী লীগের সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল ১৬ আগস্ট।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, দেশে দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিনের একটি হলো, যেদিন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। আর যেদিন সৈনিকেরা পুনরায় স্বাধীনতাকে উজ্জীবিত করেছিল বিপ্লবের মাধ্যমে। দুটি দিনেই জিয়াউর রহমান দেশের মানুষকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
মোশাররফ হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত ও ৭ নভেম্বর রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা কারণে হয়েছে। এ দুই দিনে মানুষ যেভাবে রাজনীতিবিদদের চেয়েছিল, তাঁরা সেভাবে এগিয়ে আসতে পারেননি। আর এ কারণেই বিপ্লব হয়েছিল। এটা আওয়ামী লীগ সহ্য করতে পারে না। এটা আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা।
সাবেক এই মন্ত্রী আরও বলেন, জিয়াউর রহমান বাকশাল রোধ করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। শিল্প ও কৃষিতে বিপ্লব আনেন। নতুন স্বনির্ভর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কাজ করেন তিনি। জিয়াউর রহমানই সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফেরান।
মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকের বাংলাদেশে ’৭২ থেকে ’৭৫-এর পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এখনো তাঁরা গায়ের জোরে ও বিনা ভোটে ক্ষমতায় আছে। লুটপাট-দুর্নীতির অর্থনীতি শুরু করেছে। ’৭৫-এর মতো ধ্বংসের শেষ সীমানায় নিয়ে গেছে দেশকে। তারা সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ ও দেউলিয়া হয়ে গেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান নিষিদ্ধ হচ্ছেন। দেশের মানুষ এ অবস্থা থেকে মুক্তি চায়।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির মহাসমাবেশে বাধা দিতে পুলিশকে ব্যবহার করছে। তবু বাধা উপেক্ষা করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও মহাসমাবেশে আসছেন। এতে পরিষ্কার, দেশের মানুষ এখন আর আওয়ামী লীগকে চায় না। হঠাৎ কেউ ক্ষমতা ছেড়ে দিতে চাইবে না। কারণ, ক্ষমতা ছেড়ে দিলে তাদের অন্যায় ও দুর্নীতির বিচার হবে।
ড্যাবের সভাপতি হারুনুর রশিদের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব আবদুস সালামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা হালিম ডোনার। এ ছাড়া বিএনপি-সমর্থিত বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা আলোচনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন।