যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য বাংলাদেশের নির্বাচন নয়, সরকার বদল: মেনন

নবগঠিত রাজনৈতিক দল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের প্রথম কনভেনশনে অতিথিরা। জাতীয় প্রেসক্লাব, ১২ নভেম্বর
ছবি: দীপু মালাকার

বাংলাদেশের নির্বাচন নয়, এ দেশে সরকার পরিবর্তন করা যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে নবগঠিত রাজনৈতিক দল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের প্রথম কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন বলেন, ‘তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) লক্ষ্য আমাদের দেশের সম্পদ দখলে নেওয়া। আমার দেশের সামুদ্রিক সম্পদ, যা এই দেশকে নতুন জায়গায় উন্নীত করতে পারে, তার দখল তাদের চাই। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে এই দেশে বঙ্গোপসাগরে তাদের ঘাঁটি দরকার। সেন্ট মার্টিনের চেয়েও বড় জিনিস তারা চায়। অত্যন্ত সঠিকভাবেই আজকের প্রধানমন্ত্রী সেটাতে রাজি হননি। সে জন্য তারা এখানে রেজিম চেঞ্জের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে।’

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত না হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদের দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছিল কি না, নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্ক আছে কি না, ফল পাল্টে দেওয়ার জন্য ক্যাপিটল হিলে আক্রমণ হয়েছিল কি না, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুর্নীতি-ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলা হচ্ছে কি না? ফলে বাংলাদেশে এসে এ দেশের ব্যাপার নিয়ে তাদের এত মাথা ঘামানোর দরকার কী?

বর্তমানে দেশে রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সামরিক-বেসামরিক আমলা ও ক্ষুদ্র ধনিক গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে গেছে বলে মনে করেন রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, ‘এটাকে ইংরেজিতে বলা হয় অলিগার্কি। এটা ঠিক যে সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর দল। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এই অলিগার্কির বাইরে গিয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। আজকে জাতীয় সংসদে শতকরা ৬০ ভাগ হচ্ছে ব্যবসায়ী। সংসদের এক ঘণ্টার বক্তব্যের মধ্যে ৩ মিনিট কেবল সাধারণ-গরিব মানুষ অথবা এলাকার কথা থাকে। আর বাকি সময়টা হচ্ছে নেতৃবন্দনা অথবা বিরোধীদলীয় নেত্রীর বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার। যখনই যে দল ক্ষমতায় এসেছে, একই চিত্র দেখা গেছে।’

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চান তৈমুর আলম

দেশের রাজনীতিতে একটা গুণগত পরিবর্তন দরকার বলে মনে করেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার। কনভেনশনে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই, যে নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে। একটা অংশগ্রহণমূলক সংসদও চাই। কিন্তু সেটি হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, মনোনয়নের ক্ষেত্রে বড় বড় দলগুলোতে প্রথম মূল্যায়নটা হয় প্রার্থীর টাকা আছে কি না।’

বর্তমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আদলে চলছে মন্তব্য করে তৈমুর আলম বলেন, ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জনগণের সেবক হলেও তাঁরা এখন নিজেদের জনগণের প্রভু মনে করেন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে রাজনীতি গণমুখী হওয়া দরকার। রাস্তায় বাস জ্বালানো, গাড়ি পোড়ানো—এগুলো কোনো সমাধান নয়। হলে ২০১৪ বা ২০১৮-তেই হতো। আবার এর পাশাপাশি গণগ্রেপ্তার করাও কোনো সমাধান নয়। এতে আরও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়, বিভেদ বাড়ে।’

নতুন দল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের প্রথম কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন রাশেদ খান মেনন। জাতীয় প্রেসক্লাব, ১২ নভেম্বর
ছবি: দীপু মালাকার

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিএনপির সাবেক নেতা ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেনও কনভেনশনে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, প্রচলিত দলগুলো ব্যর্থ হচ্ছে, মানুষ তার আশা-আকাঙ্ক্ষার জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। সে কারণেই রাজনীতিতে নতুন উদ্যোগ আসছে। ভবিষ্যতেও আসবে। সমাজ ও দেশের স্বার্থে নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ আসবেই।

এবার ৯৩টি নতুন দল নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছিল। সেগুলোর মধ্যে দুটি দল নিবন্ধন পেয়েছে। এই তথ্য তুলে ধরে বিএনএম নেতা সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি মনে করি, আরও দুই থেকে চারটা দল নিবন্ধন পেতে পারত। কিন্তু রাষ্ট্র যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে, সবকিছুর ভেতরেই একটা ষড়যন্ত্র ও অপকৌশল থাকে। নতুন ভালো রাজনৈতিক উদ্যোগকে বিতর্কিত করার জন্য বা শুরুতেই হোঁচট খাওয়ানোর জন্য রেজিমের একটা অপচেষ্টা থাকে।’

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা

চট্টগ্রামে আত্মপ্রকাশের ২৮ দিনের মাথায় ঢাকায় প্রথম কনভেনশন করে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম। ফোরামের সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, তাদের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি জামায়াত-শিবির ও জঙ্গিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা। সেই লক্ষ্যে আগামী এক মাসের মধ্যে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে জনসভা করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

কনভেনশনে নতুন এই দলের প্রথম কমিটিতে সভাপতি হন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক নেতা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) সাবেক ভিপি নাজিম উদ্দিন। সাধারণ সম্পাদক হন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের মনোনয়নে নির্বাচিত চাকসুর সাবেক জিএস আজিম উদ্দিন আহমেদ। তাঁদের কমিটির পর চাকসুতে আর নির্বাচন না হওয়ায় এখনো তাঁরা ভিপি-জিএস হিসেবে পরিচয় দেন।

আজিম উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় কনভেনশনে অন্যদের মধ্যে দলের বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী বক্তব্য দেন।