বিএনপির আন্দোলনে সমর্থন, তবে যুগপৎ কর্মসূচিতে নেই ইসলামী আন্দোলন

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবার বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তবে দলটি বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক হচ্ছে না। ইসলামী আন্দোলন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিজেদের মতো করে মাঠে থাকবে এবং আন্দোলন করবে বলে ওই দলের একজন নেতা জানিয়েছেন।

ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে ইসলামী আন্দোলন এক সমাবেশ করেছে গতকাল শনিবার। সেই সমাবেশ থেকে বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করা হয়। সমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, দেশে কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি বিভিন্ন দল ও জোটকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে গত ডিসেম্বর থেকে। এই আন্দোলনে ছিল না চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন। এমনকি ২০২১ সাল থেকে বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে সব নির্বাচন বর্জন করে আসছে। কিন্তু ইসলামী আন্দোলন ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে সংসদের উপনির্বাচন—সব পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। দলটির বিরুদ্ধে সরকারের সঙ্গে একধরনের সখ্য রক্ষা করে চলার অভিযোগও উঠেছিল।

গত জুনে অনুষ্ঠিত পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর থেকে ইসলামী আন্দোলনের অবস্থানে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।

গত ১২ জুন অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন। সেখানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

তবে ভোটের দিনে সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার পরই ইসলামী আন্দোলনের অবস্থানের পরিবর্তন হয়। দলটি তখন  ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচি থেকে সরকারের বিরুদ্ধে তারা তাদের আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়।  

ইসলামী আন্দোলন তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রেখে গত জুন মাসে সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা বিএনপিসহ বিভিন্ন দলকে আমন্ত্রণ জানিয়ে মতবিনিময়ও করেছে। এখন গতকাল শনিবার ঢাকায় সমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন বিএনপির আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানায়।

যদিও ইসলামী আন্দোলন বিএনপির আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু দুই দলের দাবির মধ্যে পার্থক্যও রয়েছে। বিএনপি আন্দোলন করে আসছে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে। সেই আন্দোলন একটা পর্যায়ে এসে দলটি এখন সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে গেছে। আর ইসলামী আন্দোলন চাইছে জাতীয় সরকার গঠন করে সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন।

ইসলামী আন্দোলনের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, তাঁদের মূল দাবির সঙ্গে বিএনপির দাবির পার্থক্য আছে। তবে তাঁরা দুই দলই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাইছেন। এ ছাড়া এখন তাঁরাও বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন না করার অবস্থান নিয়েছেন এবং সরকারের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন। সে কারণে বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন।

দলটির ওই নেতা উল্লেখ করেছেন, ইসলামী আন্দোলন বিএনপির আন্দোলনে সমর্থন জানালেও যুগপৎ আন্দোলনে থাকবে না। তাঁরা জাতীয় সরকার গঠন ও ভোটের আনুপাতিক হারে প্রতিনিধি নির্বাচনের দাবি নিয়ে নিজেদের অবস্থানে থেকে আলোদাভাবে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবেন। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে তাঁদের একটা যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। সেই যোগাযোগ বহাল থাকবে।

বিএনপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তাঁরা ইসলামী আন্দোলনের অবস্থান ও আন্দোলনের ধারা পর্যবেক্ষণ করছেন।

ইসলামী আন্দোলন অবশ্য তাদের দাবি আদায়ে সারা দেশে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগের তিন মাসের দলীয় কর্মসূচি দিয়েছে।