গণ–আন্দোলনের শঙ্কায় সাইবার নিরাপত্তা আইন করেছে সরকার

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ফাইল ছবি

জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইনকে ‘নতুন বোতলে পুরোনো মদ’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে মূলত ক্ষমতাসীনেরা তাদের লুণ্ঠন, সম্পদ পাচার ও নিপীড়ন-নির্যাতন আড়াল করার লক্ষ্যে এবং ব্যাপক গণ-আন্দোলন গড়ে ওঠার শঙ্কায় নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই এই আইন করেছে।’

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আগের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের চেয়েও সাইবার আইনে জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এই আইনকে বিরুদ্ধ মত দমনে এক বিপজ্জনক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিতর্কিত ধারাগুলো সাইবার নিরাপত্তা আইনে প্রায় সব একইভাবে রাখা হয়েছে। এটি নতুন বোতলে পুরোনো মদ। মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী এই আইন একটি নিকৃষ্ট কালো আইন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

এই সাইবার নিরাপত্তা আইন পাসের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনে গভীর উদ্বেগ রয়েই গেল বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। এ ছাড়া ডিজিটাল মাধ্যম থেকে তথ্য–উপাত্ত অপসারণ ও ব্লক করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এই আইনের অপপ্রয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এটির অপপ্রয়োগের সাজা সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। মূলত ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর লুণ্ঠন, সম্পদ পাচার ও নিপীড়ন—নির্যাতন আড়াল করার জন্যই এই কালো আইন করা হয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিলে বলা হয়েছে, ‘কোনো ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক বিন্যাসে মানহানিকর তথ্য প্রচার করলে তা হবে অপরাধ। এর সাজা হবে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানা। কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল মাধ্যমে কিছু প্রকাশ করেন—যা বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ সৃষ্টি বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটানোর উপক্রম হয়, তা হবে অপরাধ। এর সাজা হবে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এই আইন বিরোধী দল ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিকৃতভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। যেকোনো মুক্তচিন্তা ও সত্য প্রকাশের জন্য প্রত্যেক নাগরিককে অন্তত ২৫ লাখ টাকা মজুত এবং গ্রেপ্তার, হয়রানি ও কারাদণ্ডের ঝুঁকি নিতে হবে। সত্য প্রকাশের দায়ে প্রতিমুহূর্তে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমকে কেবল নিষেধাজ্ঞার খড়্গের নিচেই থাকতে হবে না, পাশাপাশি সাধারণ মানুষও নানাভাবে হয়রানি ও জুলুমের শিকার হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব।

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, গণতন্ত্রকে আরও বেশি সংকুচিত করার জন্যই এই আইন পাস করা হয়েছে। বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল এই কালো আইন পাসের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।