ইলিয়াস মোল্লাহর নগদ ২ কোটি, স্ত্রীর হাতে সোয়া কোটি টাকা

ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহফাইল ছবি

সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে হলফনামা দিয়েছিলেন, তাতে তাঁর স্ত্রীর নগদ একটি টাকাও ছিল না। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী তাঁর স্ত্রীর এখন রয়েছে নগদ ১ কোটি ৩৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।

এই হিসাবে গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে ইলিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী শূন্য থেকে এখন কোটিপতি। শুধু তা-ই নয়, আগে ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অর্থ জমা, সঞ্চয়পত্র, স্থায়ী আমানত, ইলেকট্রনিক সামগ্রী—কিছুই ছিল না তাঁর স্ত্রীর। কিন্তু এখন সবই আছে। যার মূল্য প্রায় পৌনে এক কোটি টাকার বেশি।

ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ ঢাকা-১৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালে তিনি প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও তিনি এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন।

এবারের হলফনামায় ইলিয়াস উদ্দিনের স্ত্রীর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা থাকা টাকার পরিমাণ ৪৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানত আছে সাড়ে ২১ লাখ টাকার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ইলিয়াস উদ্দিনের স্ত্রীর এসব কিছুই ছিল না।

২০১৮ সালে এই সংসদ সদস্য নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন, তাতে অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে তাঁর স্ত্রীর মাত্র ৫ হাজার টাকার আসবাব ছিল। এবার স্ত্রীর নামে আসবাবই রয়েছে সাড়ে ৫ লাখ টাকার বেশি। আর ২১টি ইলেকট্রনিক সামগ্রী আছে, যার বাজারমূল্য (কেনার সময়ের) সাড়ে ৪ লাখ টাকার বেশি।

পাঁচ বছরের ব্যবধানে সোনার গয়নার পরিমাণও তিন গুণ বেড়েছে ইলিয়াস উদ্দিনের স্ত্রীর। ২০১৮ সালের হলফনামায় তাঁর ১০ ভরি সোনা থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। এবার তা ৩২ ভরি দেখানো হয়েছে।

আগে স্ত্রীর নামে স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে রয়েছে ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। অকৃষিজমি। এর দাম প্রায় সোয়া কোটি টাকা। গত হলফনামায় এর উল্লেখ ছিল না। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে একটি বাড়ি ও একটি গাড়ি আছে। আগের হলফনায় বাড়ির মূল্য দেখানো হয়েছিল ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এবার সেই দামে ২৪ লাখ টাকা কম বলা হচ্ছে।  

স্ত্রীর এমন আর্থিক উন্নয়নের বিপরীত চিত্র ইলিয়াস মোল্লার নিজের বেলায়। আগের তুলনায় এই সংসদ সদস্যের এখন নগদ এবং ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখা টাকার পরিমাণ কমে গেছে। পাঁচ বছর আগের হলফনামায় এই সংসদ সদস্যের ব্যাংকে ছিল ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭ হাজার টাকা। এখন তা ২ কোটি ৬৪ লাখ ১০ হাজার টাকায় নেমেছে। নগদ টাকাও ২ কোটি ২৪ লাখ থেকে কমেছে ২০ লাখ।

নগদ ও ব্যাংকে জমা টাকা কমলেও ইলিয়াস মোল্লার বার্ষিক আয় বেড়েছে। ২০১৮ সালের হলফনামায় তাঁর মোট বার্ষিক আয় ছিল ২ কোটি ৭৫ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। এবারের হলফনামায় তাঁর আয় দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।

এর মধ্যে ব্যবসা থেকে এই সংসদ সদস্যের আয় প্রায় সাড়ে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালের হলফনামায় ব্যবসা থেকে তাঁর আয় ছিল ৬৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। তখন ব্যবসা হিসেবে মাছ চাষ প্রকল্প দেখানো হয়েছিল। এবার ব্যবসার বিষয়টি স্পষ্ট করেননি তিনি। শুধু বার্ষিক আয় হিসেবে দেখিয়েছেন ২ কোটি ৩৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা।

আগের বার হলফনামায় নিজের পেশা হিসেবে ব্যবসা ও বিপণিবিতানের কথা বলেছিলেন। এবার দেখিয়েছেন একটি অ্যাগ্রো ফার্ম, একটি মৎস্য খামার ও একটি বিপণিবিতান।  

আগে তাঁর নামে কোনো বাড়ি না থাকলেও এবার তিনি দুটি বাড়ি ও একটি অ্যাপার্টমেন্ট দেখিয়েছেন। হলফনামায় এগুলোর মূল্য দেখানো হয়েছে ৮০ লাখ ৪১ হাজার টাকা। রয়েছে একটি করে আবাসিক ও বাণিজ্যিক দালান। এ দুটির মূল্য সাড়ে চার কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া তাঁর নামে ৬০ ভরি সোনা আছে।