তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন চায় জামায়াত
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে যেমনি জাতীয় নির্বাচন- কোন নির্বাচন হয় না, তেমনি দলীয় সরকারের অধীনে একইভাবে স্থানীয় নির্বাচনও কোন নির্বাচন হয় না।’
আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের অষ্টম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ তাহের বলেন, ‘আজকের একটা বিষয়ে আমরা প্রায় ঐকমত্যে পৌঁছেছি, সেটা হলো নির্বাচনী আসনের সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তত্ত্বাবধানে একটি বিশেষায়িত বিশেষজ্ঞ কমিটি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, জামায়াতে ইসলামী এই সরকারের মেয়াদ ৪ মাস করার কথা বলেছে এবং স্থানীয় সরকার ও জাতীয় নির্বাচন এই দুটিই যাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়, সেই দাবি জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, আজকের আলোচনায় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেও এই সরকারের রূপরেখা নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কীভাবে করা হবে, সাবেক প্রধান বিচারপতি বা বিচারপতিদের প্রধান উপদেষ্টা করা হবে কি না, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে কি না; এসব বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
অন্যদিকে আজকের আলোচনায় সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের প্রক্রিয়া নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তত্ত্বাবধানে একটি বিশেষায়িত বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করবে। এই কমিটির পরামর্শক্রমে ইসি সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করবে। এরপর সীমানা নির্ধারণপ্রক্রিয়া কেমন হবে, সে বিষয়েও ঐকমত্য হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা সব সময় জুলাই সনদের পক্ষে। যে পরিবর্তনের জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি, তার কিছুই যদি না হয়, আগের অবস্থায় যদি থাকি, তাহলে সেক্রিফাইস (আত্মত্যাগ) একবারে অর্থহীন হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে বিপ্লব, গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে, তবে বাংলাদেশেরটা ব্যতিক্রম। কারণ, এখানে শিশু, বৃদ্ধ, ছাত্র, পেশাজীবী মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। সুতরাং জুলাই সনদ দ্রুত ঘোষণা হওয়া দরকার।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বিএনপিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। আলোচনার শুরুতে জুলাই শহীদদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে আলোচনা সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য) মনির হায়দার। এ সময় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া উপস্থিত ছিলেন।