শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে সম্প্রতি ৩৪ জন বুদ্ধিজীবীর বিবৃতি প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বুদ্ধি লোপ, নাকি বুদ্ধি খাটিয়ে শ্রমিকদের ঠকানোর জন্য তাঁরা বিবৃতিটা দিয়েছেন—সেটিই প্রশ্ন।’
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর পান্থপথে সামারাই কনভেনশন সেন্টারে টেলিভিশন ক্যামেরা-জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (টিসিএ) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি সমসাময়িক প্রসঙ্গে এ কথা বলেন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়। তথ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়।
গতকাল রোববার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সরকারের আচরণের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠান দেশের ৩৪ বিশিষ্টজন। তাঁর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক সব পদক্ষেপ ও একতরফা বিষোদ্গার বন্ধে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘৩৪ জন বুদ্ধিজীবীর বিবৃতি দেখলাম ড. ইউনূস সাহেবের পক্ষে।
ড. ইউনূস সাহেবের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলতে চাই, কেননা তিনি একজন জ্যেষ্ঠ নাগরিক এবং নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে দেননি। তাঁর প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের দেওয়ার কথা ছিল ৫ শতাংশ, যা ১২০০ কোটি টাকার বেশি। সেই ১২০০ কোটি টাকাকে জালিয়াতির মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে ৪০০ কোটি টাকা করা হয় এবং সেটাও তিনি দেননি। এ জন্য মামলা হয়েছে। এরপর জরিমানা হয়েছে। এখন মামলা বিচারাধীন।’
এই পরিস্থিতিতে ৩৪ জন বিশিষ্ট নাগরিকের দেওয়া বিবৃতি প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে ৩৪ জন বুদ্ধিজীবীকে বলতে চাই, আপনারা যে বিবৃতি দিলেন, শ্রমিকদের পক্ষে আপনাদের কোনো বক্তব্য নেই কেন? ১২০০ কোটি টাকা শ্রমিকদের পাওনা ছিল, সেই পাওনা না দিয়ে সেটা জালিয়াতির মাধ্যমে কমিয়ে ৪০০ কোটি টাকা করা হলো আর আপনারা সেটার পক্ষে বিবৃতি দিলেন! আপনাদের বুদ্ধিটা কি এখানে লোপ পেয়েছে, নাকি বুদ্ধি খাটিয়ে শ্রমিকদের ঠকানোর জন্য বিবৃতিটা দিয়েছেন—এটি হচ্ছে আমার প্রশ্ন।’
টেলিভিশনের প্রাণ হচ্ছে ক্যামেরা সাংবাদিকেরা
এ সময় টিভি ক্যামেরা-জার্নালিস্টদের উদ্দেশে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতপক্ষে টেলিভিশনের প্রাণ হচ্ছে ক্যামেরা সাংবাদিকেরা। তাঁরা শুট না করলে প্রযোজক, পরিচালক, নিউজ এডিটর, নিউজ কাস্টারদের কোনো কাজ নেই।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ক্যামেরা সাংবাদিকদের কষ্ট করে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। অনেক সময় অনেকে তেড়ে আসে, ক্যামেরা ভেঙে দেয়। অনেক ক্যামেরা সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হন। এসব ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা কাজটা করেন, এ জন্য তথ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
সব টেলিভিশন চ্যানেলের কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই ক্যামেরা সাংবাদিকদের নিয়মিত বেতন প্রদান ও তাঁদের প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার অনুরোধ জানাই।’
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই সেই অনন্য নেতা ছিলেন, রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান হওয়ার আগেই পুরো বাঙালি জাতি যাঁর কথা ও আদেশ মন থেকে মান্য করত।’
টিসিএ সভাপতি শেখ মাহাবুব আলমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক জীবনের সঞ্চালনায় সভায় সংসদ সদস্য এনামুল হক, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসচিব শাকিল আহমেদ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার নেপথ্য কুশীলবদের বিচার দাবি করেন।