ছাত্রলীগকে থামানোর চেষ্টা নেই

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে আবার আলোচনায় এসেছে ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগের নির্যাতনের প্রতিবাদে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। গতকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে
ছবি: শহীদুল ইসলাম

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ নিয়ে একজন আইনজীবীর রিট মামলায় অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠনের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন। ছাত্রী নির্যাতনের এ ঘটনা দুই দিন আগে গত মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ভর্তির কয়েক দিনের মাথায় ছাত্রলীগের একজন নেত্রী ও তাঁর অনুসারীদের নিষ্ঠুরতার শিকার হন এক ছাত্রী। নেত্রীদের কথা না শোনার অভিযোগ তুলে ওই ছাত্রীর ওপর সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালানো হয়। অকথ্য ভাষায় গালাগাল, মারধর, বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। ঘটনা কাউকে জানালে তাঁকে মেরে ফেলার হুমকিও দেন ছাত্রলীগের নেত্রীরা। ভয়ে ওই শিক্ষার্থী বাড়ি চলে যান। গত রোববার রাতে ইবির ছাত্রী হলের গণরুমে এ ঘটনা ঘটে। এর আগেও গত বছর ঢাকায় ইডেন কলেজে ছাত্রলীগ সভানেত্রীর হাতে দুজন ছাত্রীর মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল।

জাতীয় রাজনীতি এবং ছাত্ররাজনীতি—কোথাও গণতন্ত্রের চর্চা নেই। সে কারণে নানা অনাচার হচ্ছে। গণতন্ত্রের চর্চা না হলে ছাত্রসংগঠনের কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন আসবে না।
আবুল কাসেম ফজলুল হক, প্রবীণ শিক্ষক

অন্যদিকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের নিপীড়নের প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক গতকাল বৃহস্পতিবার অনশন করেন।

ছাত্রলীগ অনেক বেপরোয়া হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সেটাই প্রমাণ করছে। তবে অনেক বছর ধরে তারা অনেকটা বাধাহীনভাবে এমন কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে। তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের শিকার বেশি হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এমনকি এখন ছাত্রলীগের নারী নেতা-কর্মীর হাতেও সাধারণ ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে নিষ্ঠুর নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে।

আরও পড়ুন

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্রলীগ মানেই আতঙ্ক—সংগঠনটির এমন একটা ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে বলে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন। কিন্তু ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করা বা লাগাম টানার কোনো উদ্যোগ বা চেষ্টা দেখা যাচ্ছে না।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের মুখে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অবস্থান করতে পারছে না। ক্যাম্পাসগুলোতে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় আদর্শের চর্চা বা ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলা—এসব মৌলিক বিষয়ে ছাত্রলীগকে সক্রিয় হতে দেখা যায় না। বরং সংগঠনটিতে ব্যক্তিবিশেষের স্বার্থ, গোষ্ঠীস্বার্থ, আর্থিক স্বার্থের বিষয় প্রাধান্য পেতে দেখা যায়। এমন নানা রকম স্বার্থের কারণে সংগঠনটিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিভিন্ন উপদল বা দলাদলিতে মারামারির ঘটনা প্রায়ই গণমাধ্যমে আসে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উন্নয়নকাজের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির মতো অপরাধ তো আছেই। ছিনতাই, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়—এ ধরনের অপরাধের অভিযোগও রয়েছে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে।

মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব দিয়েছে। এখন ছাত্রলীগ নেতৃত্ব সংগঠনের সেই ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রাখবেন বলে আশা করি।
সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, সাবেক সভাপতি, ছাত্রলীগ

এখন সংগঠনটির নেতা–কর্মীদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছে ‘টর্চার সেলে’ সাধারণ ছাত্রকে নির্যাতনের নতুন ধারা। এতে সংগঠনটির নারী নেতা–কর্মীরাও পিছিয়ে নেই। সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছাত্রী হলে ছাত্রলীগের একজন নেত্রীর নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীদের হাতে একজন ছাত্রীকে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনা ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন ক্যাম্পাসে শিক্ষককেও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুন

তবে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের দায় নিতে রাজি নন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক মূল্যবোধের সার্বিক অবক্ষয়ের কারণে কোথাও কোনো নেতিবাচক ঘটনা কেউ ঘটালে তা সংগঠনের বিষয় নয়।

সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গত ১ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪০ দিনের ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের তথ্য সংগ্রহ করেছেন প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা। এতে ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৫টি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থী নির্যাতন, শিক্ষক-শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করা, শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের সিট দখলের অভিযোগ বেশি পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের নিজেদের মধ্যে অনেক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে চাঁদাবাজি এবং ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে। ছোটখাটো ঘটনাকে কেন্দ্র করেও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা নিজেরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেত্রীদের হাতে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটেছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রী হলের গণরুমে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদের আবাসিক হলে ছাত্রলীগের দখলে থাকা গণরুমে নির্যাতনের অভিযোগ বিভিন্ন সময় প্রকাশ পেয়েছে। এখন ছাত্রীদের আবাসিক হলেও গণরুমে ছাত্রলীগের নেত্রীদের নিয়ন্ত্রণ এবং ছাত্রী নির্যাতনের খবর বের হচ্ছে।

আরও পড়ুন

হলের সিট দখলে ছাত্রলীগ

জানুয়ারি মাসেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ছাত্র হল থেকে পরপর পাঁচজন আবাসিক ছাত্রকে বের করে দিয়ে তাঁদের সিটগুলো দখলে নিয়েছে ছাত্রলীগ। সিট হারানো এই সাধারণ ছাত্ররা ভয় ও আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানা গেছে। জানুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে আরেকটি ছাত্র হল শাহ মখদুমে একজন সাধারণ শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের হাতে মারধরের শিকার হন। ছাত্রলীগের একদল নেতা–কর্মী চাঁদা দাবি করলে তা দিতে রাজি না হওয়ায় তারা ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। ওই শিক্ষার্থী ভয়ে হল ছেড়ে গেছেন। এসব ঘটনাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নিপীড়নের প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন খান গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশন করেন।

শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

একজন শিক্ষিকাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটে ৭ ফেব্রুয়ারি। সেদিন দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রামের ওমর গণি কলেজে ওই শিক্ষিকা একটি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছিলেন। ওই শ্রেণিকক্ষেই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক একজন নেতা শিক্ষিকাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।

এ ঘটনার কয়েক দিন আগে ৩০ জানুয়ারি একজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্র হলের সহকারী প্রক্টর অমিত দত্তকে লাঞ্ছিত করেছেন ছাত্রলীগের একদল নেতা–কর্মী। আবাসিক একজন ছাত্রকে ছাত্রলীগ হল থেকে বের করে দিয়েছিল। সে ঘটনায় সহকারী প্রক্টর ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিলে তাঁকেই লাঞ্ছিত হতে হয়।

আরও পড়ুন

ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত মাসে তিনজন শিক্ষক লাঞ্ছিত হন ছাত্রলীগের হাতে। এই শিক্ষকেরা আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষক সংগঠনের নেতা।

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। এমনকি ছাত্রলীগের নিজেদের বিবাদ ও সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়েও শিক্ষক আহত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুটি উপদলের সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়ে একজন শিক্ষক আহত হন গত ৬ জানুয়ারি।

উপদলীয় সংঘর্ষ প্রায়ই ঘটছে

৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে সিটের দখল নিয়ে ছাত্রলীগের দুটি উপদলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের আন্দমোহন কলেজ, শরীয়তপুরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়—এসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের উপদলীয় সংঘর্ষ এবং এক পক্ষের সমর্থকদের আরেক পক্ষের মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার পেছনে আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং হলের সিটের দখলসহ নানা বিষয় রয়েছে।

কয়েক দিন আগে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ এলাকায় একটি বিদ্যালয় ভবন নির্মাণকাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে চাঁদা না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগে স্থানীয় ছাত্রলীগের একজন নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন।

অতীতের অনেক ঘটনা এখনো আলোচনায়

বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর। এ হত্যার ঘটনার দুই বছর পর ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার নিম্ন আদালতে বিচারে ছাত্রলীগের ২০ জন নেতার মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনের যাবজ্জীবন সাজা হয়।

গত বছরের দিকে তাকালে দেখা যায়, ওই এক বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে ১৫ বার সংঘর্ষ হয়েছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই গত বছরের ১৭ জুলাই একজন সাধারণ ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ব্যাপক আন্দোলন করেছিলেন।

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, সংঘর্ষ এবং সাধারণ ছাত্রকে নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে গত বছর।

আশির দশকে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন, এমন দুজন সাবেক নেতা প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁদের সময় ছাত্রলীগকে নিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তেমন অভিযোগ ছিল না। এখন সংগঠনটির নেতা–কর্মীরা আদর্শচ্যুত হয়ে পড়েছেন বলে তাঁরা মনে করেন।

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ গত নির্বাচনে গণফোরাম থেকে সংসদ সদস্য হয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব দিয়েছে। এখন ছাত্রলীগের নেতৃত্ব সংগঠনের সেই ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রাখবে বলে তিনি আশা করেন।

সামলাবে কে

গত কয়েক বছরে অপরাধমূলক অনেক কর্মকাণ্ড আলোচনায় আসার পর ছাত্রলীগ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওই সব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বহিষ্কার করেছে। অনেক ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও ধারাবাহিকভাবে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটেই চলেছে।

নানা অপরাধে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ নিয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন গতকাল কথা বলেছেন প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধির সঙ্গে। সাদ্দাম হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসগুলোতে সুষ্ঠু একাডেমিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য ছাত্রলীগ কাজ করছে। তিনি উল্লেখ করেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিংয়ের সমস্যা রয়েছে। এই র‍্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের আদর্শিক বিচ্যুতির প্রশ্নে সাদ্দাম হোসেনের বক্তব্য হচ্ছে, ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থী ও মানুষের কাছে দায়বদ্ধতা থেকে দিনবদলের রাজনীতি করছেন। কিন্তু যেসব নেতিবাচক ঘটনা ঘটে, তা সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে ঘটে। এটি সংগঠনের বিষয় নয় বলে উল্লেখ করেন ছাত্রলীগের সভাপতি। একই সঙ্গে তিনি এও বলেন, কেউ অপরাধ করলে আইন ও নিয়ম অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

কিন্তু পরিস্থিতি যে অবস্থায় চলে গেছে, তাতে ছাত্রলীগের লাগাম টানার বিষয় এখন বড় প্রশ্ন হয়েছে। আসলে ছাত্রলীগকে সামলাবে কে—এমন প্রশ্নের জবাব পাওয়া বেশ কঠিন। ছাত্রলীগ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকেও নিয়ন্ত্রণে কোনো চেষ্টা দৃশ্যমান নয়। আগেও বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, ছাত্রলীগের কোনো একটা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে হইচই হলে তখন নতুন আরেকটি ঘটনার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া যেন কিছু করার থাকে না।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, দেশে জাতীয় রাজনীতি ও ছাত্ররাজনীতির কোথাও গণতন্ত্রের চর্চা নেই। সে কারণে নানা অনাচার হচ্ছে। গণতন্ত্রের চর্চা না হলে ছাত্রসংগঠনের কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন আসবে না বলে তিনি মনে করেন।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এবং সিলেট, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, বরিশাল, শরীয়তপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি]