ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বিএনপির ভাষায় প্রস্তাব নিয়েছে

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের মানবাধিকারসংক্রান্ত বিষয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তাঁরা মনে করেন, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান বিদেশিদের বিভ্রান্ত করেছেন।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতারা সমালোচনামুখর হন। বিএনপি গতকাল বিকেলে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কর্মসূচির দিন পাল্টা কর্মসূচি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকালের সমাবেশটি এমনই বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন। এতে বিরোধী দল বিএনপির আন্দোলন, সরকারের পতন ঘটানোর ডাক দেওয়ারও সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এই সমাবেশের আয়োজন করে।

আগের দিন প্রচার করা হয়, সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত আসতে পারেননি। অসুস্থতার কারণে তিনি অনুপস্থিত থাকেন বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন। পরে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন।

মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খানের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আদিলুর রহমান হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে মৃত্যু নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। কিছু সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, কিছু লবিস্ট, বিএনপি-জামায়াতের হয়ে তিনি (আদিলুর রহমান) মিথ্যা রিপোর্ট দেন।’

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাব নিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বিএনপির ভাষায় আরেকটি রেজল্যুশন নিয়েছে। আপনারা বাংলাদেশে টিম পাঠান। আপনারা বলেছেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার নাই, কথা বলার অধিকার নাই, মানবাধিকার হুমকির মুখে। মানবাধিকার কি শুধু মিথ্যাচার করা? আপনারা সংখ্যালঘুদের সাথে কথা বলেন। বাংলাদেশের দুই-এক ভাগ সংখ্যালঘু যদি বলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদেরকে নিরাপত্তা দেয় নাই, সবচেয়ে ভালো অবস্থানে নাই, আমরা এ দেশে সরকারে থাকব না।’

আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে, সংসদ সদস্য হিসেবে বলতে চান যে দেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান, গারো, চাকমা—এসব সংখ্যালঘুর ৯৯ ভাগ আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আওয়ামী লীগের সময় তাঁদের অধিকার সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত থাকে। নাগরিক হিসেবে সবচেয়ে বেশি অধিকার ভোগ করেন।

‘মিথ্যা তথ্য দিয়েছিল আদিলুর’

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে হেফাজত সমাবেশ করেছিল। তিনি সে সময় খাদ্য ও ত্রাণমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। ঘটনাটি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। হেফাজতে ইসলামকে খুব অনুরোধ করেছিলেন সমাবেশ শেষ করতে। সন্ধ্যার দিকে সরকারের কাছে খবর এল, তারা সমাবেশ থেকে উঠে যাবে না। রাতের মধ্যে তারা গণভবন, সচিবালয় ঘেরাও করে সরকারের পতন ঘটাবে।

আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, ‘রাত আটটার দিকে কী দেখেছিলাম? খালেদা জিয়া বিবৃতি দিয়ে জানাল বিএনপির নেতাদের হেফাজতের পাশে দাঁড়াতে। এরশাদ ফ্রিজের ঠান্ডা পানি নিয়ে হেফাজতের পাশে দাঁড়ালেন। খাবার নিয়ে দাঁড়ালেন। সারা দেশ আতঙ্কগ্রস্ত। গণভবন ঘেরাও হবে কি না? সচিবালয় ঘেরাও হবে কি না? হেফাজতের কে প্রধানমন্ত্রী হবেন? নাকি বিএনপির কাছে ক্ষমতা দেবে—এমন এক পরিস্থিতি। আপনারা নিশ্চয়ই ভুলে যান নাই, রাত তিনটার মধ্যে শাপলা চত্বর পরিষ্কার হয়েছিল।’

‘হেফাজতের সেই সমাবেশে ৬১ জন মানুষ মারা গেছেন বলে তথ্য দিয়েছিল আদিলুর—এর চাইতে বড় মিথ্যাচার আর কী হতে পারে’—সেই প্রশ্ন করেন আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘সেই মিথ্যাবাদীর (আদিলুর রহমান) যদি বিচার হয় আইনে, সেটা কি অন্যায়?’

অতীতের প্রসঙ্গ টেনে কৃষিমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পরে পাটের গুদাম, খাদ্যের গুদামে আগুন লাগানো হয়েছে। এমনকি সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানো হয়েছে। ঈদগাহ মাঠে সংসদ সদস্যকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

বিএনপির উদ্দেশে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তাদের নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত। নতুবা ২০১৪ সালের মতো পরিণতি বিএনপিকে ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করেন তিনি।

ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আওয়ামী লীগের

সরকারের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, ‘যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের বলব, এই সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে পতন ঘটানো যাবে না।’

হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের ওপর ভর করে ২০১৩ সালে বিএনপি ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখেছিল উল্লেখ করে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘খালেদা জিয়া ভেবেছিলেন, হেফাজতের আন্দোলনে সরকার নেমে যাবে।’

২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের আল–জাজিরায় দেওয়া সাক্ষাৎকারের বিষয়েও সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, অধিকার (মানবাধিকার সংগঠন) তাদের ওয়েবসাইটে বলেছিল যে ২০১৩ সালে হেফাজতের কর্মসূচিতে ৬১ জন নিহত হয়েছে। সেটা যে মিথ্যা তথ্য ছিল, গণমাধ্যমে তা উঠে এসেছিল। তারপরও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নিন্দা জানিয়েছে।

জাতীয় নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরুর আগে আগামী ৪৫ দিন রাজপথে থেকে আওয়ামী লীগ লড়াই–সংগ্রাম করবে বলে জানান মির্জা আজম।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির।

আরও পড়ুন