হাওয়া ভবন করে খেতে পারছে না বলে বিএনপির দুঃখ: প্রধানমন্ত্রী

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাঁয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও ডানে সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ। ঢাকা, ০১ সেপ্টেম্বর
ছবি: পিআইডি

দেশের উন্নয়ন বিএনপি চোখে দেখে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি অভিযোগ করেন, হাওয়া ভবন করে খেতে পারছে না বলেই বিএনপির দুঃখ। নির্বাচন বিএনপির মনের কথা না। তারা মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে আবার ছিনিমিনি খেলতে চায়।

আজ শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে এই ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছুই তাদের ভালো লাগে না। কিছুই তারা দেখে না। তাদের চোখ অন্ধ। আধুনিক চক্ষু ইনস্টিটিউট করেছি। আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। আমি নিজেও সেখানে চোখ পরীক্ষা করাই। যারা উন্নতি দেখে না, তারা ১০ টাকা টিকিট কেটে চোখ দেখাক। আসলে তাদের মনের দরজাই অন্ধকার। তারা পরাজিত শক্তির পদলেহনকারী। হাওয়া ভবন করে খেতে পারছে না বলেই বিএনপির দুঃখ।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নির্বাচন তাদের মনের কথা না। মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে আবার ছিনিমিনি খেলতে চায় তারা। তাদের জন্ম হয়েছে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে। তারা নাকি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে। এ দেশের কল্যাণ বিএনপি চায় না। তারা দেশকে ধ্বংস করতে চায়।’

জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে পেরেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টে বন্দী করা হয়েছিল। জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি। স্বাধীনতার সুফল মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে কাজ করেছি। দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি, নিজের ভাগ্য না, নিজের জন্য কিছু করার চিন্তা করিনি।’

একটি বড় দেশ বারবার চাপ দিয়েছে

শেখা হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু করতে গিয়ে আমাদের ওপর বদনাম দিয়েছিল। একটি ব্যাংকের এমডি পদের জন্য। সেটিও সরকারি বেতনধারী। আইনে আছে, ৬০ বছর থাকতে পারবে। এরপরেও বেআইনিভাবে ১০ বছর চালিয়ে আবারও সেখানে থাকতে হবে। একটি বড় দেশ বারবার আমাদের ওপর চাপ দিত। এমডি পদে না রাখলে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেবে। ওই ভদ্রলোক তো মামলা করেছিল। কিন্তু আদালত তো বয়স বাড়াতে পারেনি। মামলায় হেরে যায়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হিলারি ক্লিনটন নিজে অর্ডার দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করেছিলেন। বলেছিলাম, কারও কাছে হাত পেতে না। নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করব। সেটি করে দেখিয়েছি। বাংলাদেশ পারে, বাংলাদেশের মানুষ পারে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল—এগুলোতে লাভবান হচ্ছে দেশের মানুষ।’  

চক্রান্ত এখনো শেষ হয়নি

স্বাধীনতার পর থেকে শুরু হওয়া চক্রান্ত এখনো শেষ হয়নি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তারা স্বাধীনতাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। ২০০১ সালে নতুন চক্রান্ত হয় যে আমাদের গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমি রাজি হইনি। খালেদা জিয়া রাজি হয়ে গেল। ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় কী অত্যাচার করা হয়েছে। আমাদের নেতা–কর্মীরা রাতে ঘরে থাকতে পারেনি। ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেনি। নির্বাচনের পরে হাতুড়ি দিয়ে মানুষ হত্যা করা হলো।’

বিএনপির শাসনামলের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের সময় ছিল দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, সেশনজট। হাওয়া ভবন খুলে খাওয়া শুরু হয়ে গেল। দেশটাকে জঙ্গিদের, সন্ত্রাসীদের, লুটেরাদের দেশে পরিণত করেছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি কয়টি আসন পেয়েছিল? ৩০টি আসন পেয়েছিল ২০–দলীয় জোট। এই কথা জনগণকে মনে করিয়ে দিতে হবে। বিএনপি ভোটে আসতে চায় না। তারা মানুষের শান্তি কেড়ে নেয়। মানুষের কল্যাণ করতে পারে না।

বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না

বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলের চেষ্টা করা হয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালের পর যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা দেশকে কী দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলেছিল, ৭ মার্চের ভাষণ, জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল। পরাজিত শক্তির পদাঙ্ক অনুসরণের চেষ্টা করা হয়েছিল। এখন হত্যা হলে বিচার চায়, আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা মানবাধিকারের কথা বলে। আমাদের ১৫ আগস্ট বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। বিচার চাইতে পারিনি।’

প্রধানমন্ত্রী নিজের দেশে ফিরে আসার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ‘মৃত্যুকে ভয় করিনি। কোনো বাধা আটকাতে পারেনি। দেশের মানুষের ভাগ্য বদল করব, এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে কাজ করেছি।’

ছাত্রলীগের প্রশংসা

ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন–সংগ্রাম, অর্জনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছাত্রলীগ। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বুকের রক্ত দিয়ে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। ১৯৭৫ সালের পরেও প্রথম প্রতিবাদ করেছিল ছাত্রলীগ। প্রতিটি দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ছাত্রলীগের তারুণ্যের শক্তি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

খালেদা জিয়া ছাত্রদলের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল, এই অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগকে দিয়েছিলাম খাতা আর কলম। মানুষের মতো মানুষ না হলে আদর্শ বাস্তবায়ন করা যায় না। অশিক্ষিত–মূর্খদের হাতে দেশ পড়লে তার অগ্রযাত্রা হতে পারে না।’