মার্কিন প্রতিনিধিদলের প্রশ্ন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা কোথায়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্‌-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকেদর সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান। ঢাকা, ১০ অক্টোবর
ছবি: সংগৃহীত

সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চারটি বৈঠক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। এসব বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধিদল জানতে চেয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা কোথায় এবং নির্বাচনের সময় কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।

পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত এসব বৈঠকে ছিলেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, আইনজীবী, নারী সংসদ সদস্য, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। রাজধানীর গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে এসব বৈঠক হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সদস্যরা গতকাল সকালে প্রথমে যান রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে। সেখানে বৈঠকের পর প্রতিনিধিদল যায় ওয়েস্টিন হোটেলে। এই হোটেলে প্রথম বৈঠকটি হয় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড–এর সম্পাদক ইনাম আহমেদ, ঢাকা ট্রিবিউন–এর সম্পাদক জাফর সোবহান ও প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান। বৈঠক শেষে জাফর সোবহান ও সোহরাব হাসান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

জাফর সোবহান বলেন, ‘কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে, তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল জানতে চেয়েছিল। আমরা বলেছি, দুই দলকে একসঙ্গে বসতে হবে। একসঙ্গে বসে তারা যদি কোনো অ্যাগ্রিমেন্টে (সমঝোতায়) আসতে পারে, তাহলে সেটা দেশের জন্য ভালো হবে।’

অন্যদিকে সোহরাব হাসান বলেন, ‘তাঁরা (মার্কিন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা) নির্বাচনের পরিবেশ, পরিস্থিতি জানতে চেয়েছেন। আমরা বলেছি, নির্বাচন নিয়ে দুই পক্ষের দুই অবস্থান। নির্বাচনী সমস্যার সমাধান করতে হলে দুই পক্ষকেই আলোচনায় বসতে হবে।’

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর বর্তমান ও সাবেক পাঁচজন নারী সংসদ সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। আলোচনায় ছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ, সংরক্ষিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির শেরীফা কাদের ও নাজমা আকতার, আফরোজা হক (জাসদ) ও সাবেক সংসদ সদস্য (বিএনপি) নিলোফার চৌধুরী।

আলোচনার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনজন। তাঁদের মধ্যে সেলিমা আহমাদ বলেন, আগামী নির্বাচনে কী করে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বৃদ্ধি করা যায়, নারীদের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা যায়, নারীরা যাতে কোনো সহিংসতার মধ্যে না পড়েন—এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

রাজনৈতিক কোনো আলোচনা হয়নি উল্লেখ করে নিলোফার চৌধুরী বলেন, সহিংসতার আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল। সহিংসতা হবে কি না, কতটুকু হতে পারে, তখন নারীদের কী করণীয়—এসব বিষয়ে কথা হয়েছে।

আফরোজা হক বলেন, ‘আমরা প্রতিনিধিদলকে বলেছি, নারীদের বেশি করে মনোনয়ন দিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাহলেই কিন্তু প্রতিকূলতা কমে যাবে, সম্ভাবনা বাড়বে।’

এরপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ ইজাজ কবিরের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেননি এই আইনজীবী।

সবশেষে সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। এই বৈঠকে ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী সাঈদ আহমেদ ও বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাসের সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব।

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাধা কোথায়—মার্কিন প্রতিনিধিদল তা জানতে চেয়েছে বলে জানান শারমিন মুরশিদ। তিনি বৈঠকে বলেছেন, নির্বাচন সহিংসতার দিকে এগিয়ে গেছে। নির্বাচনের সময় ক্ষমতার লড়াইয়ের জায়গা থেকে দুর্বল গোষ্ঠীর ওপর কিছু অত্যাচার হয়ে যায়।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলা হয়, তা সাম্প্রদায়িক, স্বাধীনতাবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে হয় বলে মার্কিন প্রতিনিধিদলকে বলেছেন নিমচন্দ্র ভৌমিক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সব দলকে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ধারণ করতে হবে—এমনটি তিনি বৈঠকে বলেছেন।