হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবার ওপর আক্রমণ হচ্ছে: মির্জা ফখরুল

হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বক্তব্য দেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়, ২০ আগস্ট
ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর  হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবার ওপর সমানভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির এই শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে আমরা অত্যন্ত দুঃখ ও ঘৃণার সঙ্গে লক্ষ করেছি যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যাদের আমাদের নিজস্ব ভাই মনে করি, তাদের ওপর অত্যাচার হয়েছে, তাদের মন্দির-উপাসনালয়ে আক্রমণ হয়েছে। শুধু হিন্দু নয়, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবার ওপর সমানভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। এটাই সত্য, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’

শনিবার বিকেলে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের দোষারোপ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জন্মাষ্টমীর দিনে বক্তব্যে রেখেছেন, সেই বক্তব্যে বলেছেন, “একটা কিছু ঘটলেই আপনারা ঝাঁপিয়ে পড়েন, এমন মনে হয় যে আপনারা হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাই অত্যাচারিত হচ্ছেন।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থাৎ আপনাদের ওপর যখন আঘাত করা হয়, মন্দির, বাড়িঘর ভাঙচুর করা হলে যখন প্রতিবাদ করেন, সেই প্রতিবাদটাকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মনে করছেন আপনারা ভুল করছেন, অন্যায় করছেন, বাড়িয়ে বলছেন, অতিরঞ্জিত করছেন।’

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাবের সময়, আর বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় বহুলাংশে মিল আছে—এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘একইভাবে আজকেও মানুষের অধিকারগুলোকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে দেখছি, খালেদা জিয়া যিনি সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাঁকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ৬০০–এর বেশি নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে, খুন করা হয়েছে প্রায় হাজারের ওপর মানুষকে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার নিজেই বলে গেছেন এ দেশে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা চলছে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-মুসলমান যুদ্ধ করেছেন। লক্ষ্য ছিল একটি সুস্থ-মুক্ত সমাজ গড়ব, গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলব, সেই লক্ষ্য থেকে দেশকে সম্পূর্ণভাবে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে বর্তমান সরকার। তিনি বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য, একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার জন্য সরকার সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে, দেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এ দেশে কখনোই শান্তি আসবে না, কোনো সম্প্রদায়ের মানুষ, ব্যক্তি নিরাপদে থাকবে না, যতক্ষণ না দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বিজন কান্তি সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা নিতাই রায় চৌধুরী, সুকোমল বড়ুয়া, সুব্রত চৌধুরী, সুশীল বড়ুয়া, জয়ন্ত কুমার কুণ্ড, অমলেন্দু দাস অপু প্রমুখ।