সাক্ষাৎকার

বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা সফল হবে না

সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে বিএনপির আইনজীবী ফোরামের নেতা জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনোয়ার হোসেন

প্রথম আলো:

আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপিকে ‘বেআইনি’ দল, সন্ত্রাসী দল হিসেবে উল্লেখ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। এ থেকে কেউ কেউ ধারণা করছেন, বিএনপিকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে। আপনি কী মনে করেন?

জয়নুল আবেদীন: এ ধরনের চিন্তা ও তৎপরতা সংবিধানবিরোধী, আইনের শাসনের পরিপন্থী। সরকার দীর্ঘদিন ধরেই একদলীয় ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ভবিষ্যতে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করতে পারে। তবে তারা জনগণের প্রতিরোধের কারণে সফল হবে না।

প্রথম আলো:

বিএনপির নেতাদের একের পর এক সাজা হচ্ছে। এটা নিয়ে কি আপনারা চিন্তিত?

জয়নুল আবেদীন: ২৮ অক্টোবের আগে থেকেই পুরোনো মামলায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপির নেতা–কর্মীদের যেনতেনভাবে সাজা দেওয়া হচ্ছে। ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর এর গতি বেড়েছে। ভৌতিক মামলায়, সাক্ষীবিহীন অবস্থায় বিএনপির নেতা–কর্মীদের সাজা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে মৃত ব্যক্তিকেও সাজা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ থেকেই বোঝা যায় এগুলো পুরোপুরি রাজনৈতিক।

প্রথম আলো:

এ ধারায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদেরও সাজা হওয়ার ঝুঁকি দেখছেন?

জয়নুল আবেদীন: সরকারের প্রথম লক্ষ্য ছিল বিএনপিকে ভেঙে টুকরো টুকরো করা। এতে তারা ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এখন শীর্ষ নেতাদের সাজা দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। সরকারের একজন মন্ত্রী নিজেই সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে নেতাদের ছেড়ে দেওয়া হতো। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি বলে প্রতিশোধ নিতে চাইবে। কিন্তু জনগণের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য হবে না।

প্রথম আলো:

বিএনপি এখনো সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছে। আওয়ামী লীগ তা পাত্তা না দিয়ে নির্বাচনের প্রায় দ্বারপ্রান্তে। আপনাদের দাবির বিষয়ে কোনো আশা দেখেন?

জয়নুল আবেদীন: আমাদের দাবি এখন গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। মানুষ ভোটাধিকারের জন্য সোচ্চার। ইতিমধ্যে দেশে ও বিদেশে এই নির্বাচন ভাগাভাগির নির্বাচন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এটি এখন ঘোষণার নির্বাচনে পরিণত হয়েছে। কারণ, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিনই ঠিক হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ১৪ দল, কিংসা পার্টিসহ কে কতটি আসন পাবে, তা ঠিক হয়ে গেছে। ভোটের আর কোনো প্রয়োজনই নেই।

প্রথম আলো:

নির্বাচন হয়ে গেলে বিএনপির আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কী হবে?

জয়নুল আবেদীন: এটি বিএনপির একার আন্দোলন নয়। অন্যান্য দল তথা সাধারণ মানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যৎ পন্থা জনগণই ঠিক করবে।

প্রথম আলো:

আপনারা আদালত বর্জন কর্মসূচি পালন করছেন। এটা কি প্রতীকী?

জয়নুল আবেদীন: এটা প্রতীকী নয়, কার্যকর আন্দোলন। ইতিমধ্যে বিএনপি ছাড়াও দলনিরপেক্ষ আইনজীবীরা এতে যুক্ত হচ্ছেন। এটা ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলন। ফলে সবাই এর সঙ্গে আছেন।

প্রথম আলো:

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একাধিকবার বলেছেন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ব্যক্তি ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মেরে ফেলা—লাশ বানানোর চক্রান্ত করছে বিএনপি। আপনি কী বলবেন?

জয়নুল আবেদীন: এগুলো অহেতুক রাজনৈতিক বক্তব্য। বিএনপি অহিংস আন্দোলন করে আসছে। ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করে না। বিভিন্ন স্থানে বোমা বানাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজনের মারা যাওয়ার খবর এসেছে। বোমা বানাতে গিয়ে ছাত্রলীগ ধরা পড়ার পর বলা হচ্ছে, তারা বিএনপি করে। এগুলো সরকারের পরিকল্পিত অপপ্রচার।

প্রথম আলো:

৭ জানুয়ারি ভোটের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে, এটা স্পষ্ট। ওই সরকার মেয়াদ শেষ করবে, নাকি আপনারা পদত্যাগে বাধ্য করতে পারবেন?

জয়নুল আবেদীন: জনগণই সবকিছু ফয়সালা করবে। সরকার বলছে, ভোট উৎসব। আর জনগণ দেখছে, তারা নিজেরা নিজেরা সংঘাতে লিপ্ত। ভোটের দিনও তারা সংঘাতে লিপ্ত হবে। এদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। ফলে জনগণ পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

প্রথম আলো:

বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে খালেদা জিয়া অসুস্থ, তারেক রহমান বিদেশে। অন্য শীর্ষ নেতারা কারাগারে। বিএনপি কি নেতৃত্বের সংকটে ভুগছে?

জয়নুল আবেদীন: বিএনপিতে সংকট সৃষ্টি করতেই সরকার দায়িত্বশীল নেতাদের অন্যায়ভাবে কারাগারে রেখেছে। এরপরও বিএনপির আন্দোলন থেমে নেই। বিএনপির আন্দোলন এখন জনতার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। ফলে সরকারের কোনো পরিকল্পনাই সফল হবে না।