গণতন্ত্রের কথা যারা বলে, তারা স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গেও আপস করে

অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর আত্মজীবনী ‘আমার জীবন আমার সংগ্রাম’ নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভার আয়োজন করে বাঙ্গালা গবেষণা নামের একটি সংগঠন। ঢাকা, ২৭ এপ্রিলছবি: সংগৃহীত

গণতন্ত্রের কথা যারা বলে, তারা আবার স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গেও আপস করে—এ মন্তব্য এসেছে ঢাকায় একটি বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে। সেখানে আলোচকেরা বলেছেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল হচ্ছে, নিজেদের বাস্তবতায় রাজনৈতিক লক্ষ্য ঠিক করতে পারিনি। সংকটে নিজেদের পথ নিজেদেরই খুঁজে বের করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ আত্মজীবনী লিখেছেন। ‘আমার জীবন, আমার সংগ্রাম’ বইটির পাঠ উন্মোচন ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। আজ শনিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজক বাঙ্গালা গবেষণা নামের একটি সংগঠন।

অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ তাঁর বইয়ে নিজের জীবনের সম্পৃক্ততা থেকে ষাটের দশকের রাজনীতি, স্বাধীনতাসংগ্রাম ও স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিকে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের কথা যারা বলি, তারা কিন্তু আবার স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে আপস করি। আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল হচ্ছে, নিজেদের বাস্তবতায় রাজনৈতিক লক্ষ্য ঠিক করতে পারিনি। দেশ একটি কঠিন সংকটে পড়েছে। এ জন্য নিজেদের পথ নিজেদেরই খুঁজে বের করতে হবে।’

ষাটের দশকের রাজনীতিতে ছাত্র ও রাজনীতিকেরা যেভাবে একত্র হয়ে সংকট নিরসনে ভূমিকা রেখেছিলেন, তাঁদের পরবর্তীকালে আর সেভাবে একত্রে দেখা যায়নি—এ বক্তব্যও এসেছে আলোচনায়।

আলোচকদের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ছাত্ররাজনীতি যদি মানুষের কাজে না আসে, তাহলে সে রাজনীতি কোনো কাজে লাগে না, মূল্যবোধ বলেও কিছু থাকে না।

মাহবুব উল্লাহর বইকে রাজনৈতিক দলিল হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, কীভাবে আদর্শিক রাজনীতি হারিয়ে যায়, তা এ বইতে উঠে এসেছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি বিদেশিদের দ্বারা প্রভাবিত। যে রাজনীতিতে বাইরের প্রভাব থাকবে, সেখানে বিভাজন থাকবেই। কারণ, দেশের ভেতরে শিকড় গড়ে উঠছে না।

প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ১৯৬৯ ও ১৯৭১ সালে যাঁরা সংগ্রামী ছিলেন, তাঁরা কি পরে একসঙ্গে থাকতে পেরেছেন? মত, পথের ভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু একত্র থাকার পরিবেশ পরিস্থিতি নেই। এখন ঐক্য নেই। বিচ্ছিন্নতা হচ্ছে বড় দুর্বলতা।

ষাটের দশকের রাজনীতির কথা তুলে ধরে নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, ষাটের দশকে যাঁরা বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাঁদের একজন মাহবুব উল্লাহ। ১৯৯১ সালের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার যে সংকট তৈরি হয়, তা নিরসনে তিনি ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করেছিলেন। আর ইতিহাস পরিবর্তন এক ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে না। এর জন্য সামগ্রিক ভূমিকার বিষয় থাকে।

আবদুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন নারীনেত্রী শিরীন হক, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার প্রমুখ।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেকে।