সংস্কার বাস্তবায়নের বল এখন রাজনৈতিক দলগুলোর কোর্টে: বদিউল আলম মজুমদার

‘নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার। শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘অনেকগুলো বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে। এখন এগুলো বাস্তবায়নের বিষয়। এখন বলটা বহুলাংশে আমাদের রাজনৈতিক দলের কোর্টে। দলগুলোকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে যে কীভাবে সংস্কার বাস্তবায়িত হবে। একই সঙ্গে এ ক্ষেত্রে সরকারকেও সুস্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে।’

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে বদিউল আলম মজুমদার এ কথাগুলো বলেন।

‘নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার পথ’ শিরোনামের এ বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলো।

বৈঠকে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ছয়টা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে আমরা ঐকমত্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছি। এই ছয়টা কমিশন সমাজের সব স্তরের মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছে। তারা তাদের মতামত নিয়েছে। আমরা নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে শুধু ঢাকাতেই নয়, ঢাকার বাইরেও অনেকগুলো সংলাপ করেছি। আমরা একটা জরিপ করেছি, যেখানে ৪৬ হাজার ব্যক্তি মতামত দিয়েছে। এভাবে সব কটি কমিশনে সর্বস্তরের জনগণের মতামত নেওয়া হয়েছে। তাই এটা শুধু রাজনৈতিক দল কিংবা কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতামতের প্রতিফলন, তা বলা যাবে না।’

২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমাদের ঠিক করতে হবে। শেখ হাসিনা বিদ্যমান নিয়মনীতি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকেই কাজে লাগিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করা হয়েছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া হয়। শেখ হাসিনার পক্ষে এটা সম্ভব ছিল, সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে তিনি ব্যবহার করেছেন। এগুলো করেই এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যার পরিণতিতে শেখ হাসিনাকে পালাতে হয়েছে। এখন এ বিষয়গুলো যদি আমরা মেরামত না করি, বিদ্যমান পদ্ধতি-প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার মধ্যে যদি আমরা পরিবর্তন না আনি, তাহলে আমাদের আগে যা ঘটেছে, তারই পুনরাবৃত্তি ঘটবে।’

বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, ‘আমরা একটা ঐকমত্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। অনেকগুলো বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এখন এগুলো বাস্তবায়নের বিষয়। এখন বলটা বহুলাংশে আমাদের রাজনৈতিক দলের কোর্টে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সংগত কারণেই অবিশ্বাস আছে। কিন্তু দলগুলোকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে যে কীভাবে সংস্কার বাস্তবায়িত হবে। একই সঙ্গে আমাদের সরকারেরও করণীয় আছে—এ ক্ষেত্রে সরকারকে সুস্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে। আমরা দাঁড়িয়ে আছি অনেক রক্তের ওপর। এত আত্মত্যাগ যেন ব্যর্থ না হয়। শেখ হাসিনার মতো স্বৈরাচারের পুনরাবির্ভাব যাতে আবার না ঘটে, সেটা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারকেও তার ভূমিকা যথার্থভাবে পালন করতে হবে।’

আরও পড়ুন

প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে গোলটেবিল বৈঠক শুরু হয়েছে। সঞ্চালনা করছেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন উপস্থিত আছেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বেসরকারি সংস্থা পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে আজাদ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ওসমানী সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মাহফুজুর রহমান, দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা উপস্থিত আছেন অনুষ্ঠানে।