‘বিএনপির পরিচয়ে’ মাঠ দখল করে মার্কেট, উচ্ছেদ করলেন বিএনপি নেতারা

পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠ দখল করে গড়ে ওঠা অস্থায়ী মার্কেট উচ্ছেদ করে এই ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় বিএনপির নেতারাছবি: সংগৃহীত

পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠ দখল করে গড়ে ওঠা অস্থায়ী মার্কেট উচ্ছেদ করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। আজ সোমবার দুপুরে সূত্রাপুর থানা বিএনপি ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের নেতৃত্বে মাঠটি দখলমুক্ত করা হয়। এ সময় মাঠের ফটকে ‘শিশুদের খেলাধুলার জন্য সংরক্ষিত’ লেখা ব্যানারও টাঙানো হয়।

বিএনপি নেতাদের এমন উদ্যোগে খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা বলছেন, মাঠ ফেরত পাওয়ায় শিশু-কিশোরেরা আগের মতো খেলাধুলা করতে পারবে। স্থানীয় বাসিন্দারা আশ্বাস দিয়েছেন, ভবিষ্যতে যেন আর কেউ মাঠ দখল করতে না পারেন, সে ব্যাপারে তাঁরা সচেষ্ট থাকবেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ২০২১ সালের ১০ মার্চ এই মাঠ দখলমুক্ত করে শিশুদের জন্য উন্মুক্ত করেছিলেন। এর পর থেকে মাঠটি প্রতিদিন ফুটবল-ক্রিকেট খেলার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়। তবে সম্প্রতি স্থানীয় বিএনপির পরিচয়ে একটি চক্র মাঠ দখল করে অস্থায়ী মার্কেট তৈরি করে এবং প্রায় ৩৬ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছে দোকান ভাড়া দেয়।

এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ থাকলেও ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেননি। তবে বিষয়টি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নজরে এলে তাঁরা উচ্ছেদের নির্দেশ দেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের নাম ভাঙিয়ে একটি চক্র মাঠ দখল করে মার্কেট বসিয়েছে, এমন খবর পেয়ে মহানগরের শীর্ষ নেতারা উচ্ছেদের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আজ মাঠ অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে।’

সূত্রাপুর থানা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘এই মাঠ আবার কেউ দখল করতে পারবে না। ৪২ ও ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতারা মাঠের দেখভাল করবেন। বিএনপির নামে এখানে কেউ দখল বা চাঁদাবাজি করলে তা বরদাশত করা হবে না।’

উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেন ৪২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাসূদ আফসার, সাধারণ সম্পাদক মোখলেসুর রহমান এবং ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি কাজী আবদুল কাইয়ুম, সাধারণ সম্পাদক ফয়েজসহ স্থানীয় নেতারা।

বিএনপি নেতা মাসূদ আফসার বলেন, ‘যারা এই মাঠে দোকান বসিয়েছিল, তারা বিএনপির কেউ না। আমরা লক্ষ্মীবাজারে কোনো অবৈধ দখল হতে দেব না।’

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ অন্যায় করলে ছাড় পাচ্ছে না, এটা আবারও প্রমাণিত হলো। সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর মহানগরের নেতারা দ্রুত ব্যবস্থা নেন।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, লক্ষ্মীবাজার সমাজকল্যাণ সংঘের নামের একটি নামসর্বস্ব সংগঠন মাঠটি দখল করে। এ চক্র গত কয়েক বছরে ঈদ মেলা ও বৈশাখী মেলার আয়োজন করে লাখ লাখ টাকা আয় করেছে। সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৩০–৪০ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়ে মাঠে ৩০টি দোকান বসানো হয়। সপ্তাহে প্রতিটি দোকান থেকে ভাড়া নেওয়া হতো এক থেকে দেড় হাজার টাকা।

উচ্ছেদে ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘অ্যাডভান্স টাকা দিয়েছি, চৌকি কিনেছি। এখন উচ্ছেদ করায় সব ক্ষতি হলো। টাকা ফেরত পাব কি না, জানি না।’

ওই ব্যবসায়ী আরও দাবি করেন, নির্বাচনের পর আবার মাঠে দোকান বসানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।