ভোটের প্রচারকৌশল ও ভোট নিয়ে প্রশিক্ষণের বড় কর্মপরিকল্পনা বিএনপির

প্রতিটি আসনে নির্বাচনী এজেন্ট, পোলিং এজেন্ট ও একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার ঠিক করছে বিএনপি। তাদের জন্য শিগগির প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হবে। আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ করা হবে। এ লক্ষ্যে ধানের শীষ প্রতীকের সব প্রার্থীর কাছ থেকে তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রার্থীরা একজন নির্বাচনী এজেন্ট, দুজন পোলিং এজেন্ট ও একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের নাম-ঠিকানা ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য কেন্দ্রে জমা দিচ্ছেন।

জানা গেছে, নির্বাচনী মাঠে দলীয় কর্মসূচি প্রচারের পাশাপাশি প্রতিপক্ষ প্রার্থীর বয়ানের পাল্টা বয়ান তৈরির ওপর জোর দেওয়া হবে। প্রতিটি আসনের একজন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বিষয়ক ব্যবস্থাপকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে। তার আগেই বিএনপি তাদের দলীয় নির্বাচন কর্মীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ করতে চায়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ ও প্রশিক্ষণে সম্পৃক্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালকে (ডিআই) সম্প্রতি বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনবিষয়ক প্রশিক্ষণের জন্য অর্ধশতাধিক ব্যক্তির নামের তালিকা দেওয়া হয়েছে। তালিকার সবাইকে কয়েক ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে দুই ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রম জানুয়ারির মাঝামাঝি শেষ হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আসনভিত্তিক পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেবে।

এ ছাড়া বুধবার থেকে চূড়ান্ত প্রার্থীদের ‘ইলেকশন ক্যাম্পেইন ম্যানেজমেন্ট’ ট্রেনিং দিচ্ছে বিএনপি। এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা শেষ হবে শনিবার। পরে জেলাভিত্তিক মাস্টার ট্রেনিং কার্যক্রম শুরু হবে। তাঁরা সবাইকে কেন্দ্রভিত্তিক ট্রেনিং দেবেন। এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আরাফাত বিল্লাহ খান জানান, প্রচারে ধানের শীষের প্রার্থী কী বলবেন? প্রচারে কী কী বিষয় উল্লেখ থাকবে? বিরোধী প্রার্থীরা সম্ভাব্য কী ন্যারেটিভ তৈরি করতে পারেন? কাউন্টার ন্যারেটিভ কী হতে পারে—এসব নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হবে।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রায় ১০০ জন প্রার্থী মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি সভায় যুক্ত হন। মতবিনিময় সভায় নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে চলা, ভোটের প্রচারেরকৌশল নিয়ে তাঁদের নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, ক্রীড়া, খতিব-ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সামাজিক মর্যাদা ও জীবনমান উন্নয়ন, নদী-খাল-বিল ও পরিবেশ রক্ষা, স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা ও দক্ষ জনশক্তি এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ—এই আট বিষয়ের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ভোটের প্রচার-প্রচারণা কীভাবে কাজ করবেন, সেটিও প্রার্থীদের সামনে তুলে ধরেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

জানা গেছে, দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবার বরিশাল, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের ১১০ জন এমপি প্রার্থীর সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে বিএনপি। আগামীকাল শনিবার ফরিদপুর, সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম বিভাগের ৯০ জন প্রার্থীর সঙ্গে বৈঠক করবে দলটি।

বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা-২ আসনে দলের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, মতবিনিময় সভায় বিএনপির আগামীর পরিকল্পনা ও দলের প্রচার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ মিডিয়াকে কীভাবে নির্বাচনী প্রচারকাজে লাগানো যাবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধে করণীয়, বিশেষ করে একজন প্রার্থীর আচরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে নানা পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিহউল্লাহ ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক সহসম্পাদক নেওয়াজ হালিমা ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারীর পরিচালনায় সভায় বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জিয়াউদ্দিন হায়দার, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন ও জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা রেহান আসাদ।