ইসিতে বাগেরহাটে চার আসন বহালের দাবি বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির

নির্বাচন কমিশনে শুনানি শেষে সংবাদ ব্রিফিং করেন বাগেরহাটের রাজনৈতিক নেতা ও প্রতিনিধিরা। আজ সোমবার দুপুরেছবি: প্রথম আলো

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহালের দাবি জানিয়েছেন বাগেরহাটের বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা–কর্মীরা।

আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শুনানিতে অংশ নিয়ে এই দাবি জানান তাঁরা। শুনানি চলাকালে ইসি ভবনের সামনে বাগেরহাটের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে মানববন্ধন করতে দেখা গেছে।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা ‘সিইসি জানে না, বাগেরহাটবাসী হারে না’, ‘আসন নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘বাগেরহাটে চারটি আসন, মানতে হবে মানতে হবে’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

নির্বাচন কমিশনের শুনানি শেষে আইনজীবী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাগেরহাট জেলার যে চারটি আসন ছিল তা পূর্বের মতো বহাল থাকুক, এটাই আমাদের দাবি। নির্বাচন কমিশনের কোনো সিদ্ধান্তের কারণে মানুষের ভোগান্তি বাড়ুক, এটা কাম্য নয়। আমরা আশা করছি, কমিশন বিষয়টি আমলে নেবে।’

বাগেরহাটে সংসদীয় আসন কমানো হলে উন্নয়ন ব্যাহত হবে বলে মন্তব্য করেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা কাজী মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, বাগেরহাটের মানুষের যাতায়াত ও যোগাযোগব্যবস্থা অনেক নাজুক। কাজেই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে এই জেলায় পাঁচটি আসন প্রয়োজন। কিন্তু কমিশন আসন চারটি থেকে কমিয়ে তিনটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দল, মত ও ধর্ম নির্বিশেষে জেলার সর্বস্তরের মানুষ এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মোল্লা রহমতুল্লাহ বলেন, ‘যদি নির্বাচন কমিশন বাগেরহাটের কোনো মানুষকে কষ্ট দিতে চায়, আমরা কমিশনের সামনে অবস্থান করব। সাধারণ মানুষের দাবি অনুযায়ী বাগেরহাটে চারটি আসন পুনর্বহাল করতে হবে।’ নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে অংশ নিতে চাইলে তাঁকে সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন মোল্লা রহমতুল্লাহ।

শুনানি শেষে অংশগ্রহণকারী বাগেরহাট প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘অংশগ্রহণকারীদের বেশির ভাগের মতামত একই রকম হওয়ায় সবাইকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমরা আপনাদের অভিযোগ লিপিবদ্ধ করেছি।’

গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশনের বিশেষ কারিগরি কমিটি বাগেরহাট জেলার চারটি আসন কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দিলে জেলার রাজনৈতিক দলগুলো একযোগে এর প্রতিবাদ শুরু করে।

প্রতিবাদের অংশ হিসেবে গতকাল রোববার সকাল থেকে জেলাজুড়ে সড়ক অবরোধ ও হরতাল পালিত হয়। এতে জেলার ভেতর ও বাইরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

শুনানিতে আরও অংশ নেন, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপাচার্য অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, বাগেরহাট বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এস হালিম, বাগেরহাট তিন আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত এমপিপ্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট জেলা জামায়াতের আমির রেজাউল ইসলাম প্রমুখ।

বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে গতকাল সকাল থেকে জেলাজুড়ে সড়ক অবরোধ ও হরতাল চলছে।

গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশনের বিশেষ কারিগরি কমিটি বাগেরহাট জেলার চারটি আসন কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দিলে জেলার রাজনৈতিক দলগুলো একযোগে এর প্রতিবাদ শুরু করে। এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত আছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে আটটি আসন করার দাবি

এদিকে বিকেলের শুনানিতে অংশ নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি আসনকে ভেঙে আটটি করার দাবি জানান পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধিরা। শুনানিতে অংশ নেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহাদাত ফরাজী, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি পাইশিখই মারমা, নাজমুল হক, সৈয়দ ইবনে রহমত প্রমুখ।
আসন বৃদ্ধির দাবি তুলে পাইশিখই মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আসন বৃদ্ধির দাবি নিয়ে শুনানিতে অংশ নিলেও কমিশন তাঁদের বক্তব্যে গুরুত্ব দেয়নি। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও সমতলের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এ বৈষম্য ঘোচাতে আমাদের আসন আটটিতে উন্নীত করা জরুরি।’

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে সোমবার সকাল ১০টায় দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু হয়। দুপুরে বিরতি দিয়ে আলোচনা চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। নির্বাচন কমিশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত শুনানিতে বাগেরহাট ছাড়াও আসনের সীমানা নিয়ে ভিন্নমত থাকা যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন আসনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।