রওশনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা, পরে স্থগিত

রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের

দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টির (জাপা) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছে একটি পক্ষ। যদিও রাত ৯টার দিকে এ ঘোষণার দেড় ঘণ্টা পর তা স্থগিত করা হয়। কাজী মামুনুর রশীদ নামের এক ব্যক্তি জাপা ও বিরোধীদলীয় নেতার মুখপাত্র পরিচয় দিয়ে রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন।

গতকাল বুধবার রাত নয়টার দিকে ‘লাঙ্গলবার্তা’ নামে ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম মেসেঞ্জার গ্রুপে ওই ঘোষণা দেওয়া হয়। জানা গেছে, এই মেসেঞ্জার গ্রুপটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠজনেরা।  

জি এম কাদেরের নাম উল্লেখ না করে ওই ঘোষণায় বলা হয়, দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায় আইনি জটিলতা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ কো–চেয়ারম্যানদের মতামত ও সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ওই ঘোষণার আধা ঘণ্টা পরে ‘জাপা প্রেস উইং’ নামে আরেকটি ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল রাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ কো–চেয়ারম্যানদের সিদ্ধান্তে রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটিও পরিচালনা করেন রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠরা। এই বিজ্ঞপ্তিতেও মামুনুর রশীদের নাম রয়েছে।

এই বিজ্ঞপ্তিতে ছয়জন নেতার নাম উল্লেখ করা হয়। তাতে কো–চেয়ারম্যান এ বি এম রহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন ও সালমা ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম ও নাসরিন জাহানের নাম রয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার ২ মিনিট পর একই গ্রুপে জানানো হয়, সভায় উপস্থিত নেতাদের স্বাক্ষরপত্রসহ বিস্তারিত আসছে। পরে রাত সাড়ে ১০টায় মামুনুর রশীদ এক বার্তায় জানান, রওশন এরশাদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়ার আদেশ স্থগিত করা হয়েছে।

এর আগে রাত পৌনে ১০টার দিকে জাপার কো–চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গোপালগঞ্জের বাড়ি থেকে মাত্র ঢাকায় এলাম। প্রেসিডিয়ামের মিটিং সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।’

জাপার বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কো-চেয়ারম‌্যান‌দের কো‌নো বৈঠক হয়‌নি। এ ধরনের সিদ্ধান্তের খবরও তাঁরা জানেন না।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘কেউ যদি এ ধরনের সিদ্ধান্তের কথা জানান, সেটি অসাংগঠনিক ও ভুয়া। কারণ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদের ওপর আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। কেবল গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে দলীয় সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করতে হলে তিনি দলের সিনিয়র কো–চেয়ারম্যান হতে পারেন। আর এটি করতে হলেও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে হবে। এর বাইরে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

আগের দিন মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রওশন এরশাদসহ জি এম কাদের সাক্ষাৎ করেছিলেন। পরদিন রাতে রওশনকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার ঘোষণা এবং তা স্থগিতের কথা জানান তাঁর অনুসারীরা।

আরও পড়ুন

পরে রাতেই জাতীয় পার্টির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণার যে বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা দলের গঠনতন্ত্রের ধারা ২০ উপধারা ২ খ এর পরিপন্থী। এই বিধান অনুযায়ী পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই।

এদিকে জাপা চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদের আপাত দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। এ-সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদন গতকাল নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে ৯ জানুয়ারি ধার্য তারিখে জেলা জজ আদালতে জি এম কাদেরের করা আপিল শুনানি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন