চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে এবার নাছির ও ছালাম প্রতিদ্বন্দ্বিতায়

আগে থেকেই দুই নেতার মধ্যে কিছুটা দূরত্ব বিদ্যমান। নগর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পরিচালনা এবং সম্মেলন বিষয়ে এখন দুজনের অবস্থান দুই শিবিরে। পরস্পরের প্রতি অভিযোগ পৌঁছেছে গণভবন পর্যন্ত। এবার এই দুই নেতা অবতীর্ণ হয়েছেন মনোনয়ন দৌড়ে। চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হতে চান দুজনই।

তাঁদের একজন দলের সাধারণ সম্পাদক, অন্যজন কোষাধ্যক্ষ। দুজনই দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদে দায়িত্ব পালন করছেন। সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র। কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান।

নগর কমিটিতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী-আ জ ম নাছির উদ্দীন বলয়ের বিপরীতে আবদুচ ছালামের অবস্থান। তাঁর বলয়টি প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীপন্থীদের ঘিরে। বর্তমানে মহিউদ্দিনপুত্র শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী পক্ষ হিসেবে তিনি পরিচিত। গত রোববার গণভবনে নগর কমিটির দুটি পক্ষ উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিল। এখন দুজনই প্রার্থী হতে চান চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে।

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের তফসিল ঘোষণার পর নড়েচড়ে বসেছেন এই দুই নেতাসহ মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এলাকায় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আনাগোনা বেড়েছে। উঠেছে পোস্টারও। আ জ ম নাছির উদ্দীন ও আবদুচ ছালামের মতো পুরোনো আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশাপাশি কিছু ব্যবসায়ী এবং পেশাজীবীও ক্ষমতাসীন দলটির মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। তাই ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেলেই সংসদ সদস্য হওয়ার পথ অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

৫ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম-৮–এর সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ মৃত্যুবরণ করলে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৭ এপ্রিল উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আসনটিতে। মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় আগামী ২৭ মার্চ। তার আগে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী কে হবেন, তা দল ঠিক করবে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচনে দলের প্রার্থী নির্ধারণ হতে আরও সময় লাগবে। মার্চের শেষ সপ্তাহের শুরুতে মনোনয়ন বোর্ড হয়তো বসবে। তখনই নির্ধারিত হবে, কে প্রার্থী হচ্ছেন। দল থেকে নাকি জোট থেকে, তা–ও তখন জানা যাবে।
কিন্তু এখন থেকে মাঠে নেমে পড়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে হেভিওয়েট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন আ জ ম নাছির উদ্দীন ও আবদুচ ছালাম।

দুজনের মধ্যে মনেনায়ন প্রতিযোগিতা বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন পুরোনো বেশকিছু নাম শোনা যাচ্ছে। আ জ ম নাছির উদ্দীন ওই আসনের বাসিন্দা নয়। তবে তিনি সিটি করপোরশনের মেয়র ছিলেন। তাই আসনটির অংশ চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশে তাঁর বিচরণ দীর্ঘদিনের। এ ছাড়া তিনি বোয়ালখালীতেও বেশ কিছু অনুষ্ঠানে ইদানীং অংশ নিচ্ছেন।

মনোনয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনোনয়ন চাইব কি না, তা সময় বলে দেবে। তবে সবকিছু নির্ভর করবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওপর। তাঁর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। দল চাইলে নির্বাচন করব।’

আরও পড়ুন

এক প্রশ্নের জবাবে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির বলেন, ‘আসনটির বেশির ভাগ অংশ নগরে পড়েছে। তিন লাখের বেশি ভোটার নগরের। দেড় লাখ ভোটার বোয়ালখালীর। সাধারণ সম্পাদক এবং মেয়র হিসেবে শহরের অংশে কাজ করেছি। বোয়ালখালীর জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে। সংসদ নির্বাচনে যেকোনো জায়গা থেকে প্রার্থী হওয়া যায়।’

নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা। ওই আসন এলাকায় তাঁদের বেশ কিছু শিল্পকারখানাও রয়েছে। একাদশ সংসদ এবং ২০২০ সালের উপনির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। এ ছাড়া ২০২০ সালে মেয়র পদেও মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তখন আ জ ম নাছিরও প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। এলাকার বাসিন্দা ও ভোটার হিসেবে এবার উপনির্বাচনে তাঁর সুযোগ একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ছালাম।

আবদুচ ছালাম বলেন, ‘আমার জন্ম, কর্ম ও বাসস্থান—সবকিছু এ আসনে। আমি চান্দগাঁও এলাকার সন্তান। চান্দগাঁও বোয়ালখালীতে আমার কারখানায় ২৫ হাজার কর্মী কাজ করেন। ২০০৮ সালে সিডিএ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে জনগণের জন্য কাজ করেছি। এখন মনোনয়ন চাইব। যদি সুযোগ পাই তাহলে আরও বেশি করে কাজ করার সুযোগ পাব। তবে সবকিছু নেত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।’

দলের সাধারণ সম্পাদকের মনোনয়ন চাওয়া প্রসঙ্গে আবদুচ ছালাম বলেন, পাগল ছাড়া সবাই মনোনয়ন চাইতে পারেন। সিদ্ধান্ত নেবে দল।

আরও পড়ুন

মনোনয়ন দৌড়ে নেমেছেন আরও কিছু পুরোনো এবং নতুন নেতা। তাঁদের মধ্যে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এস এম আবুল কালাম, তাঁর ভাই ব্যবসায়ী এস এম আবু তৈয়ব, মোছলেম উদ্দিনের স্ত্রী শিরিণ আহমেদ, সাবেক সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান বাদল, নগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য বিজয় কিষাণ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের নেতা আবদুল কাদের সুজন অন্যতম।

আসনটি শূন্য হওয়ার পর থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের এলাকায় যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এর মধ্যে অনেকে প্রার্থী হতে চাই শীর্ষক পোস্টারও সাঁটিয়েছেন। চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন, ব্যবসায়ী সুকুমার চৌধুরী, এপিপি কামাল পাশা, আবদুল কাদের সুজন নির্বাচনী এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পোস্টার টানিয়েছেন। বিজয় কিষাণ চৌধুরী এক বছর ধরে বোয়ালখালী এলাকায় বিভিন্ন উৎসব–পার্বণে দান খয়রাত করে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন।

বিজয় কিষাণ চৌধুরী বলেন, ‘আমি বোয়ালখালীর সন্তান। আগে যাঁরা মনোনয়ন পেয়েছেন, তাঁরা এই অংশ থেকেই পেয়েছেন। এলাকার সঙ্গে আমার যোগাযোগ অনেক দিনের। মনোনয়ন চাইব।’

আসনটিতে আওয়ামী লীগ নিজেদের দলের প্রার্থী দেবে, নাকি জোটগতভাবে অন্য কোনো দল থেকে দেবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ১৪ দলীয় জোট বিএনএফের আবু কালাম আজাদও মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির কামাল পাশাও প্রার্থীতার জন্য কাজ করছেন।

২০০৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আমৃত্যু আসনটিতে সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মইন উদ্দিন খান বাদল। জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুর পর ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোছলেম উদ্দিন আহমেদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে বাদলের স্ত্রী সেলিনা খানও প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। এবারও সেলিনা খান প্রার্থী হতে চান।

সেলিনা খান বলেন, ‘পাঁচ বছরে দুটি উপনির্বাচন কারও কাম্য নয়। খুবই দুঃখজনক। তারপরও সব আল্লাহর ইচ্ছা। এবার আমি নির্বাচন করার জন্য শতভাগ প্রস্তুত। বাকিটা প্রধানমন্ত্রীর ওপর। আমি জাসদ পছন্দ করতাম না। আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতিও করিনি।’