কমিশন নাকি আরেকটা রাজনৈতিক দলের ওপর অনাস্থা, বুঝতে পারছি না: সিইসি

নির্বাচন কমিশনের প্রতি কিছু রাজনৈতিক দলের অনাস্থা প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, কমিশনের ওপর অনাস্থা, নাকি আরেকটা রাজনৈতিক দলের ওপর অনাস্থা, সেটা বুঝতে পারছেন না। তিনি মনে করেন, একজনের দায় আরেকজনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সমীচীন নয়।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এসব কথা বলেন। আগামীকাল রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আজ দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন সিইসি। এ সময় অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, পররাষ্ট্রসচিব ও নির্বাচন কমিশনের সচিব উপস্থিত ছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘গ্রহণযোগ্যতার কোনো সুস্পষ্ট মানদণ্ড থাকে না। এটি একটি আপেক্ষিক বিষয়। কেউ বলবেন চমৎকার গ্রহণযোগ্য, কেউ বলবেন একেবারে গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু আমরা চেষ্টা করব, নির্বাচনটাকে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য করে তুলতে।’ তিনি বলেন, ‘এখানে দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা এসেছেন, গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা এসেছেন। দৃশ্যমানতার মাধ্যমে স্বচ্ছতার বিষয়টা তাঁরা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করবেন; যাতে জনগণ নির্বাচনপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা দেখতে পান। আমরা আশাবাদী, এতে নির্বাচন দেশে ও বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে।’

এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর বর্তমান নির্বাচন কমিশন বলেছিল, নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনাই তাদের মূল চ্যালেঞ্জ। এখন এটা স্পষ্ট যে একটা অংশে আস্থা ফিরিয়ে আনতে আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। আস্থা ফিরিয়ে আনতে যে পারলেন না, এর দায়ভার কি এড়াতে পারবেন?

জবাবে সিইসি বলেছেন, ‘আমাদের ওপর অনাস্থা, নাকি আরেকটা রাজনৈতিক দলের ওপর অনাস্থা, সেটা আমি বুঝে উঠতে পারছি না। নির্বাচন কমিশন কী করবে? একজনের দায় আরেকজনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া আমি সমীচীন মনে করি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে অসীম ক্ষমতার অধিকারী মনে করা হয়। কিন্তু সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে স্পষ্টভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একটা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, একটা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাকে নির্বাচনটা করতে হবে।’

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা এই নির্বাচনকে একধরনের ‘সিলেকশন নির্বাচন’ বলছেন। বিএনপিসহ ১৬টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এতে এই নির্বাচনকে ঘিরে নতুন কোনো সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখেন কি না?—এক সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘শুধু সিলেকশন নয়, আরও অসংখ্য অভিধায় অভিষিক্ত করে অনেকে বক্তব্য দিয়েছেন। যাঁরা বক্তব্যগুলো দিচ্ছেন, তাঁরা তাঁদের নিজস্ব বোধগম্যতা থেকে, নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই বিশেষণগুলো প্রয়োগ করছেন। আমরা স্পষ্ট করে জানিয়েছি যে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন আয়োজন করা। রাজনৈতিক কোনো বিতর্কে জড়িত হওয়া বা সম্পৃক্ত হওয়া আমাদের কাজ নয়। আমরা নির্বাচনটাকে নির্বাচনের মতো করে আয়োজন করতে যাচ্ছি। কাজেই যে বিতর্কের কথা বলেছেন, সেটা রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে থাকবে। এর হয়তো সুরাহা একসময় রাজনীতিবিদেরা করবেন। আমাদের অনুগ্রহ করে সহযোগিতা করবেন নির্বাচনটাকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘এটা অনেক অনস্বীকার্য যে নির্বাচনে যেহেতু একটা বিরোধিতা রয়েছে, কোনো একটি পক্ষ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন বর্জন করছে এবং বর্জনের পাশাপাশি কার্যত প্রতিহত করার চেষ্টা করছে, সে দিক থেকে নির্বাচনটাকে শান্তিপূর্ণভাবে উঠিয়ে আনায় কিছুটা সংকট দেখা দিতে পারে। এই বাস্তবতাটা আমরা অস্বীকার করছি না। তবে আমরা যেসব প্রস্তুতি নিয়েছি, সেগুলোকে মোকাবিলা করেই প্রতিরোধ ও বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচন উঠে আসবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আগুন দেওয়া হয়েছে, হচ্ছে। গতকাল রাতেও দেখেছি একটি চলন্ত ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়েছে। এতে চারজন মারা গেছেন। অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কে আগুন লাগিয়েছে, জানি না। একটি বড় রাজনৈতিক দল নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা একটি প্রতিশ্রুতি জাতিকে দিয়েছে যে শান্তিপূর্ণভাবে তারা নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রচার করবে। অর্থাৎ কোনো সহিংস পন্থায় নির্বাচনকে বাধা দেবে না। যেটা আমরা বিশ্বাস করেছিলাম। আমরা মনে করেছি কোনো সংকট হবে না।’

সিইসি বলেন, ভোটকেন্দ্রে যেতে মানুষকে নিরুৎসাহিত করা হবে। কিন্তু নির্বাচন কেন্দ্রে যেতে মানুষকে বাধাগ্রস্ত করা হবে বা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হবে, এমনটি হয়তো হবে না। এটি এমনও হতে পারে, অগ্নিকাণ্ড বা বিভিন্ন সহিংসতার মাধ্যমে জনগণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা হতে পারে। কিন্তু এটি গুরুতর অপরাধ। রাজনীতিতে মতভেদ থাকতে পারে, এটি রাজনৈতিক নেতাদের বসে সংলাপের মাধ্যমে, সমঝোতার মাধ্যমে সেই সংকট নিরসন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন জোর করে বা কেড়ে এ দায়িত্ব নিতেও পারে না।