আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে যারা সরকার গঠন করবে, তারা জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন করবে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত নন দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ। নির্বাচিত সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে, এমনটা মনে করেন প্রতি চারজনের একজন।
প্রথম আলোর উদ্যোগে করা ‘গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপ-২০২৫’-এ এই মতামত উঠে এসেছে। প্রথম আলোর জন্য জরিপটি করেছে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কিমেকারস কনসাল্টিং লিমিটেড।
জরিপে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পরবর্তী নির্বাচিত সরকার জুলাই সনদ কতটা বাস্তবায়ন করবে? এর জবাবে ৫৭ দশমিক ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, এ বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত নন। ৪ দশমিক ৩০ শতাংশের ধারণা হলো নির্বাচিত সরকার জুলাই সনদ একেবারেই বাস্তবায়ন করবে না। আর পরবর্তী সরকার জুলাই সনদ সামান্যই বাস্তবায়ন করবে বলে মনে করেন ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ।
নির্বাচিত সরকার জুলাই সনদের আংশিক বাস্তবায়ন করবে বলে মনে করেন ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ উত্তরদাতা। আর সনদের পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করেন ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ পরবর্তী সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে পারে বলে মনে করেন ২৫ দশমিক ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা।
রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ধারাবাহিক আলোচনার ভিত্তিতে প্রস্তুত হওয়া একটি দলিল হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘ আলোচনার পর গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এক অনুষ্ঠানে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করে বিভিন্ন দল।
জুলাই সনদের বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দলের অবস্থানের পার্থক্য আছে। বিশেষ করে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি কীভাবে নিশ্চিত হবে, সনদের ওপর গণভোট নির্বাচনের আগে নাকি পরে হবে, সংসদের উচ্চকক্ষ পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে গঠিত হবে কি না—এসব বিষয় নিয়ে পাল্টাপাল্টি আলোচনা দেখা গেছে। বিএনপি নির্বাচনের দিনেই গণভোট এবং নিম্নকক্ষের আসন অনুযায়ী উচ্চকক্ষ গঠনের পক্ষে ছিল, জামায়াত-এনসিপির অবস্থান ছিল এর বিপরীত।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গত ১৩ নভেম্বর ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ জারি করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। আদেশ অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের সঙ্গেই গণভোট হবে আর সংসদের উচ্চকক্ষ পিআর পদ্ধতিতে গঠিত হবে।
জুলাই জাতীয় সনদে মোট ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব আছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ ৪৮টি প্রস্তাব সংবিধান-সম্পর্কিত।
জুলাই জাতীয় সনদে মোট ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব আছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ ৪৮টি প্রস্তাব সংবিধান-সম্পর্কিত।
প্রথম আলোর উদ্যোগে করা জরিপে দেশের ৫টি নগর ও ৫টি গ্রাম বা আধা শহরাঞ্চলের প্রাপ্তবয়স্ক (১৮-৫৫ বছর) ১ হাজার ৩৪২ জনের মতামত নেওয়া হয়। এর মধ্যে পুরুষ ৬৭৪ জন, নারী ৬৬৮ জন। জরিপে অংশ নেওয়া মানুষেরা বিভিন্ন আয়, শ্রেণি ও পেশার। গত ২১ থেকে ২৮ অক্টোবর জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
জরিপকারী প্রতিষ্ঠান বলেছে, এটি একটি মতামত জরিপ। এটি দেশের প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ, তবে নির্দিষ্টভাবে কোনো নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করে না। জরিপের নমুনা এমন মানুষদেরই তুলে ধরেছে, যাঁরা অনলাইন অথবা ছাপা পত্রিকা পড়তে পারেন এবং আগামী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জরিপের ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতার (কনফিডেন্স লেভেল) মাত্রা ৯৯ শতাংশ।