ভারতে গিয়ে আমি বলেছি, এই সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

চট্টগ্রাম নগরের জেএম সেন হলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন
ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করতে ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম শহরের জে এম সেন হলে জন্মাষ্টমী উৎসবের অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, দুই দেশেরই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। এটি সম্ভব যদি শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন দেয় ভারত।

আরও পড়ুন

ভারত ও বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কারও এমন কিছু করা উচিত হবে না, ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে এমন কোনো উসকানি দেওয়া ঠিক হবে না, যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রতিবেশী দেশে কয়েকটি মসজিদ পোড়ানো হয়েছে। সেটি দেশে প্রচার করতে দেওয়া হয়নি। এর কারণ হচ্ছে কিছু দুষ্ট লোক আছে, কিছু জঙ্গি লোক আছে, যারা এটার বাহানায় আরও অপকর্ম করবে। তিনি বলেন, ‘অনেকে আমাকে ভারতের দালাল বলে, কারণ অনেক কিছুই হয়, আমি স্ট্রং কোনো স্টেটমেন্ট দিই না।’

ভারতের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কিছুদিন আগে একজন ভদ্রমহিলা একটি কথা বলেছিলেন, আমরা একটি কথাও বলিনি।... বিভিন্ন দেশ কথা বলেছে, ...আমরা একটি কথাও বলিনি। এ ধরনের প্রটেকশনও আমরা আপনাদের দিয়ে যাচ্ছি। সেটা আপনাদের মঙ্গলের জন্য, আমাদের মঙ্গলের জন্য।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন বলেই ভারতের যথেষ্ট মঙ্গল হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘ভারতে বর্ডারে (সীমান্তে) এক্সট্রা (অতিরিক্ত) খরচ করতে হয় না। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে বছরে ২৮ লাখ মানুষ ভারতে বেড়াতে যায়। কয়েক লাখ ভারতীয় বাংলাদেশে কাজ করে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, কালো পতাকা প্রদর্শন

চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমী উদ্‌যাপন পরিষদের অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের যোগ দেওয়ার প্রতিবাদে কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি পালন করেছে ‘বিক্ষুব্ধ সনাতনী সমাজ’ নামের একটি সংগঠন। বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী অনেকের হাতে ছিল কালো পতাকা, কারও কারও মুখ ছিল কালো কাপড়ে বাঁধা।

কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল পালিত, সাধারণ সম্পাদক অশোক দেব, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নিতাই প্রসাদ ঘোষ, হিন্দু মহাজোট চট্টগ্রামের আহ্বায়ক যীশু রক্ষিত প্রমুখ।

এ কর্মসূচিতে রানা দাশগুপ্ত বলেন, সংখ্যালঘু জনগণের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বারবার বলেছেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর মিথ্যা বক্তব্যের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করুন; না হয় জাতিগত সংখ্যালঘুরা ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করবে, প্রতিরোধ করবে।

সমাবেশ শেষে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি চট্টগ্রাম শহরের চেরাগী পাহাড় থেকে আন্দরকিল্লা মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। উল্লেখ্য, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে গত জুন মাস থেকে মানববন্ধন, মিছিল, সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত জুন মাসে নয়াদিল্লিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজামণ্ডপে হামলা নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার হয়। এ ছাড়া গত বছর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ৩৩ হাজার পূজামণ্ডপ তৈরি করার কথাও বলেছিলেন তিনি। তাঁর এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন।