হাদির মৃত্যুতে শোক, প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার নিন্দা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার ঘটনায় শোক এবং প্রথম আলো-ডেইলি স্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন গণতন্ত্র মঞ্চ, গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট, ১২–দলীয় জোট, সমমনা জোট, গণ অধিকার পরিষদ, গণফোরাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নেতারা।

আজ শনিবার এক যৌথ বিবৃতি পাঠান তাঁরা। তাতে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদও জানানো হয়।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে প্রচার চালানোর সময় ১২ ডিসেম্বর আক্রান্ত হয়েছিলেন। মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদিকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলেও বাঁচানো যায়নি। গত বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যুর খবর আসার পর ঢাকায় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা চালিয়ে সংবাদপত্র দুটির কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। হামলা হয় ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবনেও।

যৌথ বিবৃতিতে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়কের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে নেতারা বলেন, শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো, তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। তাঁর সংগ্রাম ছিল একটি মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার সংগ্রাম। সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রাম। দল-মত-ধর্মনির্বিশেষে তাঁর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য লড়াই জারি রাখতে হবে।

ওসমান হাদির খুনিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন ও ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া হত্যাকারীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে থাকলে তাঁদের অতিদ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবিও জানান তাঁরা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গণমাধ্যম এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর হামলা একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। শহীদ ওসমান হাদির মৃত্যুতে জাতি যখন শোকাহত, ঠিক সেই মুহূর্তে দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি হিংস্র গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের দুই অন্যতম শীর্ষ গণমাধ্যম প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার, ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটে হামলা চালিয়ে প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে। আক্রান্ত হয়েছে এক কূটনৈতিক স্থাপনা। এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনাকে ধ্বংস করার নীলনকশার অংশ।’

‎বিবৃতিতে ময়মনসিংহে এক হিন্দু ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা ও পোড়ানোর ঘটনারও নিন্দা জানানো হয়। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।

যারা ‘মব’ উসকে দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছে, তাদের দুরভিসন্ধি রুখে দেওয়া এবং দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের কোনো ধরনের ফাঁদে পা না দিতে জনগণকে আহ্বান জানান বিবৃতিদাতারা।

অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকার পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্তু সরকারের বিভিন্ন অংশের নানান বক্তব্য এই চরম সংকটময় পরিস্থিতি তৈরির পেছনে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।’

যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের মুখপাত্র ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি উবায়দুল্লাহ ফারুক, গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, ১২–দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।

আরও পড়ুন