এবারও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ২৮ অক্টোবর ঘিরে জনমনে যে ভীতি ছিল, যে অনিশ্চয়তা ছিল, সেটিই সত্য হলো।
যখন থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একই দিনে কাছাকাছি জায়গায় তাদের ভাষায় ‘মহাসমাবেশ’ ডেকেছে, তার প্রস্তুতি নিয়ে পরস্পরের প্রতি যে মানের আক্রমণাত্মক বাক্যবাণ ছোড়া হয়েছে, তাতে জনগণ একটি সংঘাতের আশঙ্কা করে আসছিল।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যদিও বারবার জনগণকে আশ্বস্ত করেছে, তাদের সমাবেশ অহিংস হবে—সেটি কেউ বিশ্বাস করতে পেরেছিলেন বলে মনে হয় না।
নির্বাচন আসন্ন, একটি গণতান্ত্রিক সমাজে সেই নির্বাচনে জনগণের মতামত নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোনো একটি দল ক্ষমতায় আসীন হবে। নির্বাচনে জয়ী হলে কোন নীতি-আদর্শে দেশ পরিচালনা করবে, তাদের নির্বাচকদের সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য এ সময়ে তারা নানা সভা-সমাবেশ করবে, সেটিই স্বাভাবিক।
কিন্তু সভা-সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর, বিশেষত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের কথায় ও আচরণে ধারাবাহিকভাবে প্রতিনিয়ত পরস্পরের প্রতি যে আক্রমণাত্মক ভাষা এবং ভঙ্গি আমাদের দেখতে হয়েছে, শুনতে হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের মনে ভয় আর অস্বস্তিই বাসা বেঁধেছে। তারা যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তাতে মনে হয়েছে, এই সভা-সমাবেশগুলো যেন ক্ষমতার দ্বন্দ্বে তাঁদের শক্তি প্রদর্শনের রণক্ষেত্র। সেখানে জনস্বার্থ–সংক্রান্ত সব বিষয় উপেক্ষিত।
খুবই দুঃখের বিষয়, এই স্বার্থ–সংঘাতের বলি হতে হলো একজন পুলিশ সদস্যকে। আহত হয়েছেন কিছু পুলিশ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। অ্যাম্বুলেন্স ও বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গণমাধ্যমে ব্যাপক সহিংসতার খবর এসেছে। বিএনপি রোববার হরতাল ডেকেছে।
শুরু হলো সাধারণ নাগরিকদের জন্য অনিশ্চয়তার জীবন। প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় পক্ষ—কে বা কারা এই সহিংসতার জন্য দায়ী, সেটি তদন্ত করে বিচারের আওতায় না নিয়ে এলে বিগত সময়ের সন্ত্রাসী ঘটনার মতো দিনের পর দিন এ রকম দুঃখজনক ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
নিজেদের ক্ষমতার স্বার্থে সংঘাতময় পথ গ্রহণ না করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাজনৈতিক ইস্যুগুলোর সমাধান করার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা, ধারণ ও চর্চায় নিয়ে আসতে না পারলে দেশের মানুষের এই ভোগান্তির শেষ হবে বলে আশা করা যায় না। সব ক্ষয়ক্ষতিই আমাদের ক্ষয়ক্ষতি, আমাদের দুঃখের আর বিপন্নতার কারণ।
যাঁরা আমাদের জীবন পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চান, বৃহত্তর স্বার্থে তাঁরা তাঁদের আচরণে কি একটু দায়িত্বশীল হতে পারেন না?
সুলতানা কামাল সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী