খুলনা সিটি নির্বাচন

এখনো শক্তিশালী পক্ষ নেই, তাই নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ কম: কুদরত-ই-খুদা

খুলনায় সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি আইনজীবী কুদরত-ই-খুদা। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনার সভাপতি আইনজীবী কুদরত-ই-খুদা
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আর দুই মাস পর খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনের পরিবেশ কেমন দেখছেন, মানুষের মধ্যে উৎসাহ কেমন?

কুদরত-ই-খুদা: উৎসাহ–উদ্দীপনা নির্ভর করে নির্বাচনে কারা অংশ নিচ্ছে, প্রার্থীরা সমাজে কতটুকু আলোড়ন সৃষ্টিকারী, সমাজের কাছে কতটুকু প্রত্যাশিত, মানুষের প্রত্যাশা কী, তার ওপর। এখন যেটা লক্ষ করছি, আগামী দুই মাস পর আমাদের সিটি করপোরেশন নির্বাচন, এ নির্বাচনে জনগণের মধ্যে ওই ধরনের উৎসাহ–উদ্দীপনা আছে বলে এখনো দেখা যাচ্ছে না। কারণ, এটা একদলীয় প্রভাবে নির্বাচনটা হচ্ছে। নির্বাচনে বহুদলীয়, বহু মতের যে সম্মিলন ঘটার কথা, সেটা ঘটছে না।  কে মেয়র হবেন, সবাই যেন তা ধারণা করতে পারছেন। সুতরাং, এখানে নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। মানুষ জানে যে অমুক নির্বাচিত হচ্ছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: গতবার এখানে একধরনের নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন দেখা গিয়েছিল, যেটা খুলনা মডেল নামে পরিচিতি পায়। যেহেতু এবার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, তার মানে সে রকম আশঙ্কাও এবার নেই...

কুদরত-ই-খুদা: শক্তিশালী পক্ষ না থাকলে মাঠছাড়া করার বিষয় থাকে না। এখনো শক্তিশালী পক্ষ নেই। ফলে, এখন মাঠছাড়া করার কোনো প্রশ্ন নেই। বরং মাঠে রাখার জন্য একটা প্রচেষ্টা হলেও তা আশ্চর্যের হবে না। তবে নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলে যাঁরা প্রার্থী, তাঁদের মধ্যেও একটা অসন্তুষ্টি থাকবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: গত পাঁচ বছরে খুলনা মহানগরে নাগরিক প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হয়েছে?

কুদরত-ই-খুদা: মানুষের প্রত্যাশা বাড়তে থাকে। সব প্রত্যাশা পূর্ণ হয় না। কিন্তু বর্তমান মেয়রের বড় বড় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, সেগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। যেমন ময়ুর নদ সংস্কার ও পানির আধার তৈরি করা, এটি ছিল তাঁর প্রধান প্রতিশ্রুতি। এটি বাস্তবায়িত হয়নি। দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি ছিল নগরে হকারদের পুনর্বাসন করা, ফুটপাত হকারমুক্ত করা, সেটা হয়নি। তৃতীয় হচ্ছে শহরকে যানজটমুক্ত করার কথা, যানজটমুক্ত করা সম্ভব হয়নি; বরং যানজট বেড়েছে। খুলনায় এখন মনে হয় ৫০ হাজারের বেশি ইজিবাইক। খুলনার যে পরিবহন সেক্টর, সেটা একটি সিন্ডিকেট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। হয়তো মেয়র চাইলেও একা কিছু করতে পারবেন না।

আরেকটি বিষয় হলো, খুলনায় মানুষ কমছে। কারণ, কর্মহীনতা। জুট মিলগুলো বন্ধ হয়েছে। অন্যান্য যে ছোট ছোট কলকারখানা ছিল, সেগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে খুলনা একটা কর্মহীনতার শহরে পরিণত হচ্ছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: এখন খুলনায় প্রধান নাগরিক সমস্যা কী? কোনগুলো?

কুদরত-ই-খুদা: এখন প্রধান সমস্যা হচ্ছে রাস্তা। রাস্তার সংস্কার হচ্ছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি। সবচেয়ে বড় কথা, রাস্তা সংস্কার হচ্ছে সমন্বয়হীনতার ভেতর দিয়ে। সিটি করপোরেশন রাস্তা সংস্কার করছে, এখন আবার ওয়াসা সেটা খুঁড়ছে, এতে সময় অপচয় হচ্ছে, খরচ বাড়ছে, মানুষের কষ্ট বাড়ছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, খুলনা শহর এখন দ্রুত বর্ধিত হচ্ছে। এর একটি কারণ পদ্মা সেতু। খুলনা শহরে যানবাহন বাড়ছে, কিন্তু রাস্তা প্রশস্ত হচ্ছে না। রাস্তা প্রশস্ত করা না গেলে যানজটমুক্ত করা যাবে না। শহর নিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা দরকার। পরিকল্পিত নগরায়ণ করতে হবে। না হলে আগামী দিনে খুলনা একটি উন্নত মানের বস্তিতে পরিণত হবে।