ডাকসুতে শিক্ষার্থীদের থেকে সভাপতি নির্বাচনসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব ছাত্র ইউনিয়নের

সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) গঠনতন্ত্র সংস্কারে প্রস্তাব দেয় ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ। ঢাকা, ২ ফেব্রুয়ারিছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) গঠনতন্ত্র সংস্কারে বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশের) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ। আজ রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ। তিনি বলেন, সংযোজন, বিয়োজনসহ ডাকসু গঠনতন্ত্র সংশোধন প্রস্তাবকে ২০টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ২০টি ভাগকে আরও ১০১টি উপভাগে ভাগ করে সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

ছাত্র ইউনিয়নের প্রস্তাবে উপাচার্য ডাকসুর সভাপতি হবেন, এ বিধি বাতিল করে শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটে সভাপতি নির্বাচনের বিধান রাখার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া আবাসনবিষয়ক সম্পাদক, একাডেমিক অ্যাফেয়ার্স ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তাবিষয়ক সম্পাদকসহ মোট ৫টি নতুন পদের প্রস্তাব দিয়েছে তারা। স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক এবং সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক পদের সংস্কারের পক্ষে ছাত্র ইউনিয়ন। প্রভোস্ট হল সংসদের সভাপতি হবেন, এ বিধিও বাতিল চায় তারা।

ডাকসুর সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ পদে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন উল্লেখ করে প্রস্তাবে বলা হয়, ডাকসুর সভাপতি অন্য পদাধিকারীদের মতো সরাসরি শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত হবেন। এই পদে নির্বাচনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষার্থী [বর্তমান গঠনতন্ত্রের ১(ক) ও ১(খ)–এ বর্ণিত শর্ত পূরণকারী] যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। কোষাধ্যক্ষসহ নির্বাহী কমিটির সব পদাধিকারী সরাসরি ডাকসুর সদস্যদের, অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত হবেন।

ডাকসুর প্রধান ভিপি (সহসভাপতি) নন বরং সভাপতি হবেন উল্লেখ করে ছাত্র ইউনিয়নের প্রস্তাবে বলা হয়, সভাপতি সংসদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন। তিনি কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সব সভায় সভাপতিত্ব করবেন, আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে একটিমাত্র ভোট প্রদানের অধিকারী হবেন। সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন।

সভাপতির ক্ষমতা হ্রাস প্রসঙ্গে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি সংসদের যেকোনো পদাধিকারীকে বরখাস্ত করা, এমনকি পুরো সংসদ বিলুপ্ত করার ক্ষমতা রাখেন, যা একনায়কতান্ত্রিক বলে প্রতীয়মান হয়। এ ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে বিলোপ করতে হবে।

অনুষদ বা ইনস্টিটিউট সংসদ গঠনের কথা জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অনুষদ বা ইনস্টিটিউটগুলো শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন বা শিক্ষা কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু। একাডেমিক যাবতীয় বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়কাঠামোর এ অঙ্গ দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়ায় কেবল হল সংসদের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শতভাগ শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ডাকসুর কার্যপরিধি একাডেমিক স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত করতে অনুষদ/ইনস্টিটিউট সংসদের গঠন অপরিহার্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি অনুষদ ও ইনস্টিটিউটে ওই অনুষদ বা ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ সংসদ গঠিত হবে। অনুষদ বা ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত প্রত্যেক শিক্ষার্থী তাঁর নিজের অনুষদ বা ইনস্টিটিউটের ছাত্র সংসদের সদস্য বলে বিবেচিত হবেন।

ছাত্র ইউনিয়নের প্রস্তাবে বলা হয়, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে একাডেমিক ভবনে। পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, নির্দিষ্ট দখলদার গোষ্ঠীর নিজ স্বার্থে হলে নির্বাচনে নানাভাবে শিক্ষার্থীদের ভোটদানে বাধা প্রদান, নানাবিধ কারসাজির মাধ্যমে নির্বাচন প্রভাবিত করার ঘটনা প্রতিরোধ ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোটদানে স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনায় এ সংস্কার আনা জরুরি। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষদ ও ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ভবনে নির্বাচনী বুথ স্থাপন করা হবে। নির্দিষ্ট বুথগুলোতে শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ, নিজ নিজ হল ও অনুষদ সংসদের নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা নির্বাচনের জন্য ভোট দেবেন।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মেঘমল্লার বসুসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংসদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।