শেষ ধাপেও এমপিদের স্বজন ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতারা প্রার্থী

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেওয়া সিদ্ধান্ত মানেননি দল দুটির নেতাদের অনেকে। সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের স্বজনদের এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করে চার ধাপে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের ৫২ জন স্বজন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।

অন্যদিকে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে এ নির্বাচন বর্জন করলেও দলটির ৮৭ নেতা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেও অনেকে প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তবে আওয়ামী লীগ এখনো দলীয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এবার চার ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতকাল সোমবার চতুর্থ ধাপে ৫৪টি উপজেলায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পর এ চিত্র পাওয়া গেছে।

প্রথম তিন ধাপের মতো চতুর্থ ধাপের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের পাঁচ সংসদ সদস্যের স্বজনেরা প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মান্নানের ছেলে সাদাত মান্নান। রংপুরের বদরগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন তৌবিকুর চৌধুরী। তিনি রংপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর আপন চাচাতো ভাই। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থী তাজওয়ার মোহাম্মদ ফাহিম দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের আপন ছোট ভাই। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন মুশফিকুর রহমান। তিনি দিনাজপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের আপন ছোট ভাই।

এ ছাড়া খুলনার রূপসায় সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদীর ভাইয়ের ছেলে নোমান ওসমানী প্রার্থী হয়েছেন। তবে সংসদ সদস্য বিবৃতি দিয়ে ভাইয়ের ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন। কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন রেহানা বেগম। তিনি কুমিল্লা-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুল মজিদের স্ত্রী।

এর আগে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের ১৬ জন নিকটাত্মীয়, দ্বিতীয় ধাপে ১৮ জন ও তৃতীয় ধাপে ১৪ জন প্রার্থী হন।

অন্যদিকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়া বিএনপিও দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে পারেনি। দলের কঠোর অবস্থানের মুখেও চতুর্থ ধাপে বিএনপির বহিষ্কৃত অন্তত ৯ নেতা চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপ‌জেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ লিয়াকত হাসান উপ‌জেলা বিএনপির সা‌বেক সভা‌প‌তি। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপ‌জেলা বিএন‌পির সভাপ‌তি সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহান চেয়ারম‌্যান প্রার্থী হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. রফিকুল ইসলাম ও যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আল জাবেদ চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির সমর্থক ফারুক আহমেদ। টাঙ্গাইলের সখীপুরে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ফারুক হোসেন প্রার্থী হয়েছেন। নওগাঁর মান্দায় মান্দা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনোজিৎ কুমার সরকার প্রার্থী হয়েছেন। বরগুনার তালতলীতে উপজেলা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান, সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে মধ্যনগর উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক আবদুল আউয়াল, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।

এর আগে প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন ২৭ বিএনপি নেতা। তাঁদের মধ্যে ৭ জন নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে বিএনপির ৩৩ নেতা ও তৃতীয় ধাপে ১৮ জন প্রার্থী হয়েছেন।

প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা।