নৃশংস হামলা হচ্ছে, সহিষ্ণুতা প্রয়োজন

মাহবুব উল্লাহ

গণতান্ত্রিক পরিবেশে সভা-সমাবেশ করতে পারা বিরোধী দলগুলোর অধিকার। কিন্তু এই অধিকারের বিষয়টি দেশে দীর্ঘদিন ধরে কার্যত অস্বীকার করা হচ্ছে। বিরোধীদের সভা-সমাবেশসহ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে না—সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে আসা এমন বক্তব্য সহিষ্ণু পরিবেশ সৃষ্টির সুযোগ তৈরি করবে বলে ভাবা হয়েছিল।

অনেকে হয়তো মনে করেছিলেন, এটি শুভ উদ্যোগ। কিন্তু মাঠপর্যায়ে বিরোধীদের কর্মসূচিতে হামলা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নৃশংস হামলা হচ্ছে। এর ফলে পরমতসহিষ্ণু রাজনীতির যে সুযোগ, তা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয় কি না, সেই শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এই পরিস্থিতি থেকে দুটি বিষয় মনে হতে পারে। প্রথমত, শাসকগোষ্ঠীর শীর্ষ পর্যায় থেকে মাঠপর্যায় পর্যন্ত কোনো সমন্বয় নেই। এ জন্য শীর্ষ পর্যায় যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তৃণমূলে ঠিক এর উল্টো কাজ হচ্ছে। অন্যভাবে বলা যায়, ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের কথা তৃণমূল শুনছে না।

দ্বিতীয়ত, সরকার আসলে বিরোধীদের বিভ্রান্ত করার জন্য ওই বার্তা (সভা–সমাবেশে বাধা না দেওয়া) দিয়েছিল। যেমন ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বলা হয়েছিল, এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। পরে দেখা গেল—এটা ভুল। এবারও যদি সরকারের বক্তব্য ও কাজে ভিন্নতা দেখা দেয়, তা হবে দুঃখজনক।

বিরোধী দলগুলো অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম করছে। মানুষের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ তৈরি করা, গণসংযোগ করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে সভা-সমাবেশ। এই সুযোগটা তাদের দেওয়া উচিত। আর যদি এভাবে বিরোধীদের ওপর হামলা চলতে থাকে, এরপরও যদি তারা মাঠে দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে মানুষের সহানুভূতি আরও বেড়ে যাবে। যদি চাপে বিরোধীরা রণে ভঙ্গে দেয়, তাহলে মানুষের আস্থার জায়গা সংকুচিত হবে।

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যা, তাতে এখন সহিষ্ণুতার খুব প্রয়োজন। এর জন্য সরকারের সদিচ্ছা খুবই দরকার। এর ব্যত্যয় দেশের ভবিষ্যতের জন্য আশঙ্কাজনক। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক