গুম প্রতিরোধে তিন প্রস্তাব তাসনিম জারার
দেশে রাষ্ট্রীয় মদদে গুম-অপহরণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে গুমের মতো অপরাধগুলো প্রতিরোধে একটি স্থায়ী কমিশন গঠনসহ তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ প্রস্তাব দেন তাসনিম জারা। ‘গুমের স্মৃতি’ শীর্ষক এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাক’।
গুম প্রতিরোধে স্থায়ী কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়ে এনসিপির এই নেত্রী বলেন, কমিশনের হাতে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ক্ষমতা থাকতে হবে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ডিটেনশন সেন্টার, অফিশিয়াল লগবুক, ফোন ট্র্যাকিং রেকর্ড, এমনকি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার নথিতেও কমিশনের প্রবেশাধিকার থাকতে হবে।
আলামত ও নথি সংরক্ষণের প্রস্তাব দিয়ে তাসনিম জারা বলেন, অনেক প্রমাণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তবে কোন প্রমাণ কীভাবে ধ্বংস হয়েছে, তার ‘ট্রেইল (চিহ্ন)’ খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োজন হলে আন্তর্জাতিক তদন্ত সহায়তাও নিতে হবে।
এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রস্তাব দিয়ে এনসিপির এই নেত্রী বলেন, বিশেষ করে র্যাব ও ডিজিএফআইসহ যেসব সংস্থার নাম গুমের ঘটনায় এসেছে, সেগুলোর কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। তাদের কর্মকাণ্ড স্পষ্ট আইনি কাঠামো ও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
তাসনিম জারা বলেন, রাষ্ট্রীয় মদদে গুমের মতো এই অপরাধটা অনেক বছর ধরে হয়ে আসছে। খুব সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে করে যে অপরাধটা হয়েছে, সেটার সঠিক তদন্ত ও বিচার হয়। ভবিষ্যতে যাতে কোনো নাগরিককে এভাবে ভুগতে না হয়।
তাসনিম জারা আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে আসা কয়েকজন ভুক্তভোগী পরিবারের কথা তুলে ধরেন। তাঁদের মধ্যে একজন ছিল মিম নামের এক কিশোরী। এখন সে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবাকে যখন গুম করা হয়, তখন সে মাত্র তিন বছরের শিশু। তাসনিম জারা বলেন, ‘ও বাবার কোনো স্মৃতি জানে না। কেবল একটি ছবি আছে। প্রতিদিন সেই ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে। রাস্তায় যাকেই দেখে, ভাবে হয়তো এটাই তার বাবা। এ কেমন ট্র্যাজেডি?’
গুমকে সাধারণ অপরাধের সঙ্গে তুলনা করা যায় না বলে মন্তব্য করেন এনসিপির এই নেত্রী। তাঁর ভাষায়, খুন বা সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় অন্তত পরিবার জানে তাঁদের স্বজন মারা গেছে। কিন্তু গুমের ক্ষেত্রে প্রিয়জন জীবিত না মৃত, সেটিও জানা যায় না। এ এক অসহ্য অনিশ্চয়তা। এটি একটি ভিন্ন মাত্রার অপরাধ।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য আন্দোলনরত রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে এই ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তাসনিম জারা। তিনি বলেন, ‘আমরা আর সেই রাষ্ট্রে ফিরতে চাই না, যেখানে নাগরিকদের গুম করা হয়। দলীয় রাজনীতির বাইরে গিয়েও এটি সবার দাবি হতে হবে।’
আন্তর্জাতিক গুম দিবসকে কেন্দ্র করে গুমের ঘটনাগুলোর বয়ান জারি রাখা ও বিচারের দাবি জানানো এবং প্রতিটি পরিবার যাতে তাদের গুম হওয়া স্বজনদের খুঁজে পায়, সে জন্য এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান মায়ের ডাকের সংগঠক সানজিদা ইসলাম।