বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশি অভিযান

ফরিদপুর ও সিলেটে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশি অভিযান চলছে। গণসমাবেশ সামনে রেখে বিএনপির ওপর চাপ বাড়াতেই এমন অভিযান চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নেতারা। গণসমাবেশের দুই দিন আগে ফরিদপুরে নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিলেটেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে পুলিশ। তাঁদের প্রচার–প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগও বিএনপি নেতারা করেছেন।

রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত রোববার রাতে সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকায় খুন হন জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আ ফ ম কামাল। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের কর্মীরা জড়িত বলে বিএনপি অভিযোগ করে।

ওই রাতেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের একটি বিক্ষোভ মিছিল থেকে নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনস্থল ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে বিএনপির অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ২৫০ নেতা-কর্মীকে অভিযুক্ত করে মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এরপর থেকেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তারের আতঙ্কে আছেন।

‘উনারা লিফলেট বিতরণ করছেন, করুক। সারা দেশেই তো উনারা করছেন, অসুবিধা কী? জেলা পুলিশের তরফ থেকে কোনো বাধা নেই।’
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগের বিষয়ে সিলেটের পুলিশ সুপার

সিলেট মহানগরের পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনস্থলে ভাঙচুর হয়েছে, এটা তো সত্য ঘটনা। তাই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে মামলা দেওয়া হয়েছে, সেটা পুলিশ গ্রহণ করেছে। পুলিশ নিরীহ কাউকেই হয়রানি করবে না।

সিলেট সদর উপজেলার এক বিএনপি নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খুন হলেন বিএনপির একজন নেতা। এ ঘটনায় ১০ জনকে আসামি করে মামলাও হয়েছে। একজন আসামি গ্রেপ্তারও হয়েছেন। বিষয়টি ভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করতে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে আওয়ামী লীগ তাদের সম্মেলনস্থল ভাঙচুরের অভিযোগ এনে মামলা করেছে। আসলে ১৯ নভেম্বর বিএনপির সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশের প্রস্তুতিতে বাধা দিতেই মামলা দিয়ে আতঙ্ক তৈরির অপচেষ্টা করা হয়েছে। সমাবেশের সময় যতই ঘনিয়া আসবে, ধীরে ধীরে এ চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগের বিষয়ে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘উনারা লিফলেট বিতরণ করছেন, করুক। সারা দেশেই তো উনারা করছেন, অসুবিধা কী? জেলা পুলিশের তরফ থেকে কোনো বাধা নেই।’

আগামী শনিবার ফরিদপুরে বিএনপির গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশের আগে পুলিশের অভিযানে গত মঙ্গলবার রাতে নয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এঁদের একজনের বাড়ি ফরিদপুর শহরে, বাকিদের বাড়ি নগরকান্দায়। অভিযান চালানো হয়েছে ১২ বছর আগে মারা যাওয়া শহর বিএনপির সভাপতি বাচ্চু মিয়া আলীর বাড়িতে। তল্লাশি চালানো হয়েছে আরও বেশ কয়েকজন নেতার বাড়িতেও।

গণসমাবেশ সামনে রেখে গতকাল বেলা একটায় ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপি নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে গণসমাবেশের উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ফরিদপুর বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে পুলিশ বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযানের নামে হামলা করছে। পুরোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলের নামে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শনিবার বেলা ১১টা থেকে বিএনপির ষষ্ঠতম বিভাগীয় গণসমাবেশ ফরিদপুরের কোমরপুর আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে শুরু হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল হক, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নায়াব ইউসুফ, কেন্দ্রীয় বিএনপির দুই সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাশুকুর রহমান, মো. সেলিমুজ্জামান প্রমুখ।

জানতে চাইলে নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন বলেন, বিএনপির কোনো নেতা–কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। পুলিশ মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নগরকান্দার বিভিন্ন জায়গা থেকে যে আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে, তাঁরা সবাই ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসমি।

এদিকে গতকাল বিকেলে ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া হয়েছে। বিকেল চারটার দিকে মহড়া শহরের শেখ রাসেল স্কোয়ার থেকে শুরু হয়ে ভাঙ্গা রাস্তার মোড়, রাজবাড়ি রাস্তার মোড় হয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ধরে কোমরপুরে আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউশন এলাকা হয়ে ধুলদী পর্যন্ত যায়। পরে মোটরসাইকেলের মহড়া শহরের কাঠপট্টি এলাকায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে দিয়ে ঝিলটুলী হয়ে আবার শেখ রাসেল স্কোয়ারে এসে শেষ হয়।

জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শরিফুল হাসান বলেন, ‘নির্ধারিত কর্মসূচি হিসেবে এ মোটরসাইকেল মহড়া হয়েছে। আমরা জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থনে স্লোগান দিয়েছি। গণসমাবেশবিরোধী কিছু করিনি।’