আমরা এবার কোনোমতেই পরাজিত হব না: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ফাইল ছবি

স্বাধীনতার ৫১ বছর পর এসেও নিজস্ব স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এবার কোনোমতেই পরাজিত হব না। কারণ, এবার বিজয় লাভ করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।’

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় আজ শনিবার প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৫ তম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম ও উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।  

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সরকার কোনো ছাড় দেবে, প্রশ্নই উঠতে পারে না। ছাড়টা আদায় করে নিতে হবে, জনগণের শক্তি দিয়ে। আমরা যত বেশি মানুষকে রাস্তায় নামাতে পারব, যত বেশি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথ দখল করতে পারব, তত বেশি তারা পরাজিত হবে।’

গুলিতে নিহত শাওন অবশ্যই যুবদলের কর্মী ও বিএনপিকে সমর্থন করতেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে গুলি, গ্রেপ্তার ও হামলা করে আবার তারা আমাদের ন্যায়সংগত ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নিতে চায়, বিভ্রান্ত করতে চায়। নিজেদের মুক্ত করতে, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাইলে রাজপথের আন্দোলনে বিজয় অর্জন করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য, একটি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনতাবিরোধী, ফ্যাসিবাদী, মানবতাবিরোধী আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরতে বাধ্য করা।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তাদের পদত্যাগ করিয়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। এরপর নিরপেক্ষ নতুন সরকার নতুনভাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করবে, তারপর নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে জনগণের সংসদ ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তার আগে এ দেশের জনগণ কোনো কিছুই মেনে নেবে না। সরকারের জন্য সবচেয়ে ভালো হবে, তারা যদি এখনই এসব দাবি মেনে নেয়। না হলে জনগণের যে উত্তাল তরঙ্গ শুরু হয়েছে, সেই সুনামিতে তারা কেউ টিকতে পারবে না, ভেসে যাবে।’

তারেক রহমানকে বন্দী করা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা ছিল না বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। বলেন, ‘এটি সামগ্রিকভাবে এই দেশের ১৮ কোটি মানুষের মুক্তির যে স্বপ্ন, রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে সেই স্বপ্নকে সেদিন বন্দী করা হয়েছিল। এটি সেই চক্রান্তের একটি অংশ।’

এক–এগারোর প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মনে থাকার কথা, তখন মাইনাস টু বলে একটি কথা খুব প্রচার হয়ে গিয়েছিল। মাইনাস টু তো হয়নি। হয়েছে মাইনাস ওয়ান। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ওই চক্রান্ত আবার শুরু হয়েছে যে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে যারা বিশ্বাস করে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে যারা বিশ্বাস করে, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাদের মাইনাস করতে হবে।’

স্বাধীনতার ৫১ বছর পর এখন নিজস্ব স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৫১ বছর পর আমাদের গণতন্ত্রকে আবার প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই করতে হচ্ছে। এটি একটি জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছু না। এত সহজেই মুক্তি পাওয়ার কথা না। এই লড়াইটা লড়তে হবে…আমাদের এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে, এখন এই লড়াইয়ের দায়িত্ব এসে পড়েছে তরুণ প্রজন্মের ওপরে। দেশকে আবার স্বাধীন করা, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, মানুষের স্বপ্নগুলো আবার জাগিয়ে তুলে নতুন স্বপ্নের দিকে নিয়ে যাওয়া—এটি হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের দায়িত্ব।’

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘দেশের মানুষ তেল, লবণ, চালের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে যখন আন্দোলন শুরু করেছে, সেই সময় তারা (ক্ষমতাসীন দল) আঘাত হানতে শুরু করেছে। গতকাল তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপির কর্মকাণ্ডের চিত্র নিয়ে বহির্বিশ্বে যাবেন। কারণ, বহির্বিশ্ব এখন আর ওগুলো মানছে না। ওদের সেই প্রোপাগান্ডা এখন সেভাবে নিচ্ছে না। এ জন্যই আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ সতর্কভাবে নিতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এইবার বিজয় লাভ করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। ভোলার নুরে আলমের আত্মত্যাগ, রহিমের আত্মত্যাগ, নারায়ণগঞ্জের শাওনের আত্মত্যাগ—এটি কোনোমতেই বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না।’

অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ইতিমধ্যে প্রায় ৪ হাজার ৮১ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আবার সেই আগের মতোই, এক কায়দায়। সেই গায়েবি মামলা, নিজেরা ঘটনা ঘটাচ্ছে, ঘটিয়ে সাথে সাথেই তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে দিচ্ছে। পত্রিকায় এসেছে, নারায়ণগঞ্জে যে রাইফেল দিয়ে গুলি করছে, সেটি একটি চায়নিজ রাইফেল। রাইফেল হাতে সেই অফিসারের নাম কনক। অনুসন্ধান করে সঠিক কথাগুলো সামনে নিয়ে আসায় সাংবাদিকদের ধন্যবাদ। এটি প্রমাণিত হয়ে গেছে, এই কনক তার বেআইনিভাবে সংগ্রহ করা চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করে শাওনকে হত্যা করেছে।’

বাংলাদেশ ছাত্র ফোরামের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তার আলোচনায় অংশ নেন।