পুলকিত হওয়ার কারণ নেই, নির্বাচনে যারা বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধেই ভিসা নীতি প্রযোজ্য হবে: তথ্যমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ৯১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর
ছবি: পিআইডি

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, ভিসা নীতি নিয়ে কারও পুলকিত হওয়ার কারণ নেই। নির্বাচনে যারা বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধেই ভিসা নীতি প্রযোজ্য হবে।

উপমহাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের অকুতোভয় বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ৯১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এ কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট এ সভার আয়োজন করে।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, আজ বিএনপি নানা ধরনের কথা বলে। ভিসা নীতি ঘোষণার পর এক কথা বলে, আবার পত্রিকায় গত পরশু খবর আসার পর আরেক ধরনের কথা বলে। এগুলো বলে কোনো লাভ নেই। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু পরাশক্তি আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু সেই সব রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আমাদের পূর্বসূরি মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন। আজও অনেকেই চোখ রাঙায়, অনেক দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র হয়। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার ধমনিতে, শিরায় বঙ্গবন্ধুর রক্তস্রোত প্রবহমান, যে রক্ত পরাভব মানে না, আপস জানে না। সব ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে দেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ১৯৭১ সালে যারা দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তাদেরই নতুন সংস্করণ হচ্ছে বিএনপি। আর বিএনপির সহযোগী হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী, যারা দেশের স্বাধীনতার শুধু বিরোধিতাই করেনি, পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে অস্ত্র ধারণ করেছিল। তাই এই বিএনপি-জামায়াত চক্র আজ দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে, আগামী নির্বাচন ভন্ডুল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আগামী নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে যদি বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা আসেন, আমরা স্বাগত জানাই। তবে কেউ না এলেও কোনো অসুবিধা নেই। এই নির্বাচন আমাদের, এই দেশ আমাদের, এখানে নির্বাচন কীভাবে হবে, সেটি আমরা ঠিক করব। আমাদেরকে কারও গণতন্ত্র শেখাতে হবে না। গণতান্ত্রিক রীতিনীতির চর্চা আমরা জানি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অবশ্যই অব্যাহত থাকবে।’

বিপ্লবী প্রীতিলতা, সূর্য সেন আজও দেশবিরোধীদের প্রতিরোধের অনুপ্রেরণা

এর আগে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘দেশবিরোধীদের প্রতিরোধে প্রীতিলতা, সূর্যসেনের মতো বিপ্লবীরা আজও আমাদের অনুপ্রেরণা।’

১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণকারী ও ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা থেকে স্বদেশভূমির স্বাধীনতার জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গনকারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রথম বাঙালি শহীদ নারী, যিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে আত্মাহুতি দিয়েছেন। অত্যন্ত মেধাবী প্রীতিলতা ম্যাট্রিকুলেশন ও ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রামে অপর্ণাচরণ উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন, সেই স্কুল এখনো আছে।

হাছান মাহমুদ বলেন, সূর্য সেনের বিপ্লবী দলের সদস্য অসীম সাহসী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার যখন পুরুষের বেশে ইউরোপীয় ক্লাবে সফলভাবে আক্রমণ করে ফিরে আসছিলেন, তখন তিনি গুলিবিদ্ধ হন। নির্যাতনের মাধ্যমে তাঁর কাছ থেকে ব্রিটিশ শত্রুপক্ষ বিদ্রোহের পরিকল্পনা যেন না জানতে পারে, সে জন্য তিনি পটাশিয়াম সায়ানাইড পান করে আত্মাহুতি দেন।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁরা যেভাবে দেশমাতৃকার জন্য জীবন দিয়েছেন, উপমহাদেশের মুক্তিসংগ্রাম এবং আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামে তাঁদের এই আত্মদান বাঙালিদের প্রেরণা জুগিয়েছে, ভবিষ্যতেও জোগাবে। আজ তাই সূর্য সেনের প্রতি, প্রীতিলতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও প্রণতি জানাই।’

বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কার্যকরী সভাপতি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগীতশিল্পী মোহাম্মদ রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য বলরাম পোদ্দার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, একুশে পদকপ্রাপ্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল ও ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মানিক লাল ঘোষ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার প্রমুখ সভায় বক্তব্য দেন।