শেষ মুহূর্তে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে পারে বিএনপি: নজরুল ইসলাম

খুলনা সিটি করপোরেশনে সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন দলটির খুলনা মহানগর শাখার সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম (মঞ্জু)। তবে সেই নির্বাচনের তিন বছর পর দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে খুলনা বিএনপির কমিটি থেকে তাঁকে বাদ দিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। দলের ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তিনি। পরে তাঁকে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি

নজরুল ইসলাম মঞ্জু
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এ নির্বাচন নিয়ে আপনাদের চিন্তাভাবনা কী?

নজরুল ইসলাম: দল থেকে তো বারবারই বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি আর কোনো নির্বাচনেই অংশ নেবে না। পার্টির একজন কর্মী হিসেবে আমারও বক্তব্য এটি। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা যেতে পারি না।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনাদের ভেতরে কোনো ভিন্নমত আছে?

নজরুল ইসলাম: মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। অনেকে মনে করেন, এই নির্বাচনে যাতে আওয়ামী লীগ ফাঁকা মাঠে গোল দিতে না পারে, সে জন্য নির্বাচনে যাওয়া উচিত। আরেকটি মত হচ্ছে, বর্তমান সরকারের আমলে আমরা অনেক নির্বাচন দেখলাম। কোনো নির্বাচনেই মানুষ ভোট দিতে পারে না। সব জায়গায় সরকারি দল জেতে। সে ক্ষেত্রে ভোটে গিয়ে লাভ কী?

আমরা অপেক্ষা করছি, চূড়ান্ত একটি সিদ্ধান্ত বিএনপি নেবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে এর আগেও বিএনপি পড়েছে। আমাদের নেত্রী জেলখানায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে, হাজার হাজার কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা—এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বিএনপি এর আগেও আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এমনও হতে পারে, বিএনপি এটি ভাবনাচিন্তা করে শেষ মুহূর্তে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি কি মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত, না বর্জন করা উচিত?

নজরুল ইসলাম: একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দলের সিদ্ধান্তের পক্ষে থাকতে হবে। তবে আমি মনে করি, অর্থবহ নির্বাচনের জন্য বিশ্বে একটি মত গড়ে উঠেছে। জাতিসংঘ নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করছে। সরকার নানা চাপে আছে। এই নির্বাচনের পাঁচ মাস পর জাতীয় নির্বাচন। নতুন কমিশন গঠিত হয়েছে। সব মিলিয়ে একটি নতুন ভাবনা দল ভাবতে পারে। আমরাও ভাবতে পারি সরকারকে বেকায়দায় ফেলা যায় কি না। সে কৌশল হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে যেতে পারে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: এর আগে আপনি এখানে মেয়র পদে নির্বাচন করেছেন, সংসদ সদস্য পদেও নির্বাচন করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে এই নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে আপনার কোনো চিন্তাভাবনা আছে?

নজরুল ইসলাম: বিএনপি জনপ্রিয় দল। সে দলের একজন জনপ্রিয় প্রার্থী ছিলাম আমি। নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে যে আমাদের আগ্রহ নেই, তা না। নির্বাচন তো জনগণকে নিয়ে, নেতা-কর্মীদের নিয়ে। সে পরিবেশ না থাকায় এবং গণগ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা—এই প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচনে যাওয়াটা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি প্রার্থী হতে পারেন, এমন আলোচনা আছে। প্রার্থী হতে আপনার ওপর কি নেতা-কর্মী বা মানুষের কোনো চাপ আছে?

নজরুল ইসলাম: চাপ আছে, আগ্রহ আছে। প্রতিনিয়তই অনেকে আমাকে বলছেন, টেলিফোনে বলছেন, দেখা করে বলছেন। আমি বলেছি, দলের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমি তাঁদের অপেক্ষা করতে বলেছি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, সিটি নির্বাচনে বিএনপির ঘোমটা দেওয়া প্রার্থী থাকবে। আবার উকিল আবদুস সাত্তারের মতো কেউ বের হয়ে আসেন কি না, সে আলোচনাও আছে...

নজরুল ইসলাম: বিএনপিতে এমন নেতার সংখ্যা কম। যাঁরা বিএনপিকে ভালোবাসেন, বিএনপির সঙ্গে বেইমানি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা প্রকাশ্য প্রার্থী হতে চাই, দল নির্বাচনে গেলে প্রার্থী হব। দল আন্দোলন করলে আন্দোলনে...। এভাবে পালিয়ে, লুকিয়ে, দল ছেড়ে কোনো প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে চাই না।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: দল এখন আপনাকে সেভাবে মূল্যায়ন করছে না...

নজরুল ইসলাম: এটা ঠিক দল আমার ওপর অবিচার করেছে। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে যে হেনস্তার শিকার হয়েছি, যে অসম্মানজনক পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের ফেলা হয়েছে, একজন নেতা, একজন কর্মী হিসেবে দুঃসময়ের মধ্যে দেড় বছর আমরা পার করছি। দলের উচিত ছিল বিশেষ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছিল আমাদের দলে সম্মান মর্যাদা দিয়ে ফিরিয়ে নেওয়া। আমরা এখনো অপেক্ষায় আছি, বিএনপি আমাদের ওপর সুবিচার করবে। আমরা দল ছেড়ে যেতে চাই না।