আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে ১৪ দল

আওয়ামী লীগ

আসন সমঝোতা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি নাখোশ ১৪-দলীয় জোটের শরিকেরা। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর এখন আসন বণ্টন নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছেন জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু।

গতকাল শনিবার শরিক দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা জোটের সমন্বয়কের ইস্কাটনের বাসায় গিয়ে কথা বলেন। আমির হোসেন আমু ফোনেও কথা বলেন কয়েকজন নেতার সঙ্গে। শিগগিরই জোটের প্রধান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে শরিকদের।

জোটের সূত্র জানিয়েছে, আমির হোসেন আমু কোন কোন আসনে শরিকেরা তাদের দলীয় প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে, সেই তালিকা দেওয়ার অনুরোধ জানান। এর মধ্য থেকে শরিকদের অগ্রাধিকারের আসন কোনগুলো, সেটাও জানাতে বলেন। বেশ কয়েকটি শরিক দল তালিকা জমাও দিয়েছে।

জোটের সূত্রগুলো বলছে, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, জেপি ও তরীকত ফেডারেশন মিলে ২০টির বেশি আসন অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছে। এর মধ্যে ১০-১২টি আসন পাওয়ার বিষয়ে জোর চেষ্টা চালাবে তারা।

আমির হোসেন আমু প্রথম আলোকে বলেন, শরিকদের তালিকা তিনি পেয়েছেন। এটি দলীয় প্রধানের কাছে দেবেন। এরপর যেকোনো সময় জোটের শরিকদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শরিকদের মধ্যে বর্তমানে যাদের সংসদ সদস্য আছে, তাদেরই বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। অন্যদের বিষয়ে খুব একটা তাগিদ নেই আওয়ামী লীগের। বর্তমান সংসদে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে প্রতিনিধিত্ব আছে ওয়ার্কার্স পার্টির তিনটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) তিনটি এবং তরীকত ফেডারেশন ও জাতীয় পার্টির (জেপি) একটি করে আসন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে আটটি আসন রয়েছে তাদের।

শরিক দলের দুজন শীর্ষ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, আসন বণ্টন নিয়ে এর আগে এতটা অনিশ্চয়তা হয়নি। এ জন্য করণীয় ঠিক করতে গতকাল একজন নেতার বাসায় শরিক দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা বৈঠকে বসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আমির হোসেন আমুর সঙ্গে কথা হওয়ার পর সেটি বাতিল করা হয়।

তবে এবার আসন সমঝোতায় কতটা সুবিধা করতে পারবে—এই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে শরিকেরা। কারণ, ইতিমধ্যে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের আসনটি ছাড় দেওয়া হবে না বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। ফেনী-২ আসন থেকে শিরীন আখতার দুবারের সংসদ সদস্য।

আসন সমঝোতা নিয়ে জোটের প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক না হওয়ায় কিছুটা অসন্তুষ্ট শরিকেরা।

এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নির্বাহী সদস্য আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীকে। একইভাবে তিনবারের সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন ঢাকা-৮ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেননি। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। মেনন বরিশালের দুটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া চট্টগ্রাম-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের মোশাররফ হোসেন নির্বাচন না করলে তাঁকে যেন জোটের প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এই আসনে মোশাররফের ছেলে মাহাবুব উর রহমান মনোনয়ন পেয়েছেন।

জাতীয় পার্টি জেপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলামের চাওয়া আসনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়েছে। একমাত্র জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি।

জোটের সূত্রগুলো বলছে, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, জেপি ও তরীকত ফেডারেশন মিলে ২০টির বেশি আসন অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছে। এর মধ্যে ১০-১২টি আসন পাওয়ার বিষয়ে জোর চেষ্টা চালাবে তারা।

আরও পড়ুন

আসন সমঝোতা নিয়ে জোটের প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক না হওয়ায় কিছুটা অসন্তুষ্ট শরিকেরা। শরিক দলের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ইসলামপন্থী ছোট ছোট দলের নেতারা দল বেঁধে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। কিন্তু আদর্শিক জোট ১৪ দলের কোনো খবর নেই। উল্টো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রকাশ্যে জোট রাখা না রাখা এবং জোটের নেতাদের জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

আওয়ামী লীগের সূত্র বলছে, জোট নিয়ে সময়ক্ষেপণ কৌশলের অংশ। জোটগতভাবে নির্বাচন হবে—এমন ঘোষণা আগে দিলে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা কমে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। আওয়ামী লীগের মূল চিন্তা বেশি দলকে ভোটে আনা এবং ভোটারের উপস্থিতি বাড়ানো। এখন ২৯টি দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় কিছুটা নির্ভার ক্ষমতাসীনেরা। তবে ১৭ ডিসেম্বর প্রত্যাহারের আগপর্যন্ত আসন সমঝোতা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যেতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে জোটের শরিকেরা বলছে, আগামীকাল সোমবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষেই আসন সমঝোতা করতে হবে। প্রত্যাহার পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না। কারণ, ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজ নিজ আসনে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছেন। ফলে শেষ মুহূর্তে আসন সমঝোতা হলেও জোটের শরিকেরা সুবিধা করতে পারবে না।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন প্রথম আলোকে বলেন, ১৪-দলীয় জোটের সমন্বয়কের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। আশা করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শিগগিরই বৈঠক হবে এবং একটা সমঝোতা হয়ে যাবে।