যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত বিরক্ত: মির্জা ফখরুল

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সোমবার রাতে দলীয় এক বৈঠকের পর সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ছবি: বিএনপির সৌজন্যে

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত বিরক্ত হয়ে আছেন বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিএনপির মহাসচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার এত দিন পরে প্রধানমন্ত্রী তা নিয়ে বিষোদ্‌গার করলেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বোধ হয় সম্ভবত ইরিটেডেড (বিরক্ত) হয়ে আছেন।

আজ সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের এক বৈঠকের পর সাংবাদিকের প্রশ্নে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। এর আগে বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাঁর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপান সফর নিয়ে। সেই সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা নিষেধাজ্ঞা দেবে, তাদের কাছ থেকে কিছু কিনবে না বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের ব্যাপারে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছিলেন বিএনপির মহাসচিবকে। জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এ প্রশ্নটা আমারও যে উনি কেন হঠাৎ করে এত দিন পরে ওই স্যাংকশনের ওপরে বিষোদ্‌গার করলেন। তিনিই ভালো জানেন।’

একই সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘কিছুদিন আগেও কিন্তু এই স্যাংকশনের কারণে রাশিয়ার জাহাজ বাংলাদেশ ফেরত দিয়েছে, নেয়নি। বাংলাদেশ কী কেনে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে, এটা আমরা মোটামুটি সব জানি, তার পরিমাণ বলুন বা তার ভলিউম বলুন—এটাও আমরা সব জানি। সুতরাং এটা তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কেন বলেছেন, সেটা আমরা সহজেই বুঝতে পারি। তিনি বোধ হয় সম্ভবত ইরিটেডেড (বিরক্ত) হয়ে আছেন। কেন ইরিটেডেড হয়ে আছেন, সেটা আমরা ঠিক জানি না।’

আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতদের পুলিশ প্রটোকল না দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে। এর কারণ কী হতে পারে। জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এর কারণটা উনিই (প্রধানমন্ত্রী) বলতে পারবেন, উনি এত রেগেছেন কেন। উত্তরটা তিনিই ভালো দিতে পারবেন। তবে এটা খুব পরিষ্কার, তিনি অত্যন্ত ইরিটেডেড (বিরক্ত), রাগান্বিত হয়েছেন। এবং বোধ হয় সিকিউরডও ফিল করছেন না আমার কাছে মনে হয়।’

এ বিষয়গুলো দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে কি না, এমন প্রশ্নও করেন সাংবাদিকেরা। তাতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কারণ, বিষয়গুলো আমার বিস্তারিত জানা নেই। আমি আশা করব, এ ধরনের কোনো সম্পর্কের যেন অবনতি না ঘটে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে।’

প্রধানমন্ত্রীর জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর নিয়েও কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, সম্প্রতি এই সফরে বিশেষ কোনো অর্জন হয়েছে বলে তিনি মনে করেন না। এমন ধারণার ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, জাপানের সঙ্গে কিছু সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ৫০ বছর নিয়ে একটি সেমিনারে বক্তব্য রাখতে, আর যুক্তরাজ্যে গেছেন নতুন রাজার অভিষেকে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘জাতিকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ধারণা দিতে চান যে এখানে বিকল্প কোনো নেতৃত্ব নেই। সেভাবে তিনি এবার সফরটি করেছেন। এই সফর সম্পর্কে তিনি ধারণা দিতে চান যে এই সফর সম্পূর্ণভাবে সফল হয়েছে। কিন্তু আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে যে এই সফরের রেজাল্ট জিরো প্রায়।’

দেশে রিজার্ভ সংকট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, যাঁরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করেন, তাঁরাও ডলার–সংকটের কারণে আমদানি করতে পারছেন না। এর প্রধান কারণ, রিজার্ভের পরিমাণ এত কমে গেছে যে, যেটা এখন আর পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কয়েক দিন পরে এই সংকট আরও বাড়বে। যখন পদ্মা সেতুর টাকা পরিশোধ করা শুরু করতে হবে। তিনি বলেন, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন যে তৃতীয় টার্মিনাল হচ্ছে, তার জন্য আগামী বছর থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা করে পরিশোধ করতে হবে। সেই টাকা কোত্থেকে আসবে। যাঁরা বাংলাদেশের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তাঁরা খুব ভালোই জানেন বর্তমানে বাংলাদেশ একটা চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। এবং রিজার্ভের পরিমাণ এতই নেমে এসেছে যে মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার।

এর আগে বিকেলে বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকীর কর্মসূচি প্রণয়নে বৈঠক হয়। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবদুল হাই শিকদার, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী, অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে শাহাদাতবার্ষিকী পালনে ছয়টি উপকমিটি করা হয়।