খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত সরকারের চালাকি: মির্জা ফখরুল

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম আয়োজিত মানববন্ধন। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেছবি : তানভীর আহাম্মেদ

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা ৬ মাস করে স্থগিতের বিষয়টিকে সরকারের চালাকি বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই স্থগিতের মানে খালেদা জিয়ার সাজা কমছে না। ভবিষ্যতে যখন তাদের (সরকার) প্রয়োজন হবে, সাজা আবার যুক্ত হবে৷ এটা আরেকটা খেলা।

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম।

সাজানো একটি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মূল লক্ষ্য ছিল রাজনীতি থেকে খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দেওয়া৷ আইনকে বেআইনিভাবে ব্যবহার করে খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন মৃত্যুর সঙ্গে তাঁকে লড়তে হচ্ছে।

খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন সামগ্রিক আন্দোলনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়াকে আলাদা করা যাবে না। খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্র সমার্থক ও এক। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারলে গণতন্ত্রকে মুক্ত করা হবে, গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে পারলে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। যেসব চুক্তি করা হচ্ছে, তার কোনোটাই বাংলাদেশের পক্ষে নয়৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের সবক দেন, চুক্তি ও সমঝোতার পার্থক্য নাকি বুঝি না৷ শুধু একটা কথা বলব, দেশের সঙ্গে বেইমানি করবেন না৷ এমন চুক্তি ও সমঝোতায় স্বাক্ষর করবেন না, যেটা জনগণের স্বার্থবিরোধী।’

এবার ভারত সফর থেকে সরকার কী এনেছে—জানতে চেয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা নিয়ে কোনো কথা নেই৷ ভারত নাকি আমাদের কাছের বন্ধু। এত কাছের বন্ধু কিন্তু সীমান্তে গুলি করে নাগরিক হত্যা করে। এমন নজির বিশ্বে কোথাও নেই৷ সরকার আত্মরক্ষার্থে যেসব কথা বলছে, তাতে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।’

দেশ চরম বিপদে পড়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকার দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছে৷ দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে৷ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত, সংবাদমাধ্যমকে গলা টিপে ধরা হয়েছে। বেআইনিভাবে দখল করা ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করাই লক্ষ্য।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই৷ যারা আসবে, তাদের বরণ করে নেব৷ কিন্তু নিজেরা ক্ষমতায় থাকতে পুরো নির্বাচনব্যবস্থাকে দখল করে নেবেন, সেটা হতে দেব না৷ ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপির এজিএমে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, “আদালতের রায়ের পরে কোথায় থাকব জানি না৷ আপনারা গণতন্ত্রের আন্দোলনে কখনো পিছপা হবেন না।”’

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান৷ তিনি বলেন, সরকার তাদের ময়ূরসিংহাসন বজায় রাখতে সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। খালেদা জিয়া মুক্ত থাকলে তাদের সিংহাসন থাকবে না। সরকার বাংলাদেশকে অন্য দেশের দাসে পরিণত করেছে৷ শুধু স্লোগানে আটকে না থেকে রাজপথে নামতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আজিজ, বেনজীর, মতিউর সব সরকারের প্রোডাক্ট। ভারতের সঙ্গে যত চুক্তি, সব দেশের স্বার্থবিরোধী। জেল ও মৃত্যু অবধারিত, এগুলোকে ভয় পেয়ে কাউকে ছাড় দেব না। ঘরে বসে থেকে মার খেতে আর রাজি নই।’

সংসদ, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার নিজের কবজায় নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বলেন, দেশের মানুষের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত ও জনগণের টাকায় পরিচালিত এসব প্রতিষ্ঠান মুষ্টিমেয় লোকের সেবাদাসে পরিণত হয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির একটাই পথ, রাজপথে নেমে এই অবৈধ সরকারকে উৎখাত করা।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন দলের যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম, মোস্তাফিজুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক মীর সরাফত আলী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্যসচিব নিপুণ রায় চৌধুরী।