ফজলে রাব্বীর আসনে কে হচ্ছেন নৌকার প্রার্থী

নির্বাচন কমিশন ভবন
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর আসনটি (গাইবান্ধা-৫) শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এখনো উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়নি। এরই মধ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচারণা জমে উঠেছে। তাঁরা গণসংযোগ চালাচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন পেতে অনেকে তদবিরে ব্যস্ত।

ফজলে রাব্বীর আসনে কে হবেন নৌকার মাঝি, তা নিয়ে চলছে জল্পনা–কল্পনা। এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য, ১৯৭৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিগত ১১টি নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনে পাঁচবার জাতীয় পার্টি (জাপা), চারবার আওয়ামী লীগ এবং দুবার বিএনপি জয়ী হয়। উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মনোনয়নে ভুল করলে আসনটি জাপার (এরশাদ) হাতে চলে যেতে পারে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গাইবান্ধা-৫ আসনে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের ওয়ালিউর রহমান, ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির রোস্তম আলী মোল্লা এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির মতিউর রহমান (পরে তিনি মারা যান) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জাপার টিকিটে পরপর চারবার (১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের ১২ জুন) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রয়াত ফজলে রাব্বী মিয়া। তিনি ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের আইন প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। এরপর ফজলে রাব্বী মিয়া দল বদলান। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে প্রথমবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই নির্বাচনে ফজলে রাব্বী হেরে যান। সেই নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাপার রওশন এরশাদ। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ফজলে রাব্বী মিয়া। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৪৫ বছর পর তিনি আসনটি আওয়ামী লীগকে উপহার দেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে একাদশ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মনোনীত হন।

এবারের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের তিনজন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁরা হলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান ওরফে রিপন, ফজলে রাব্বীর মেয়ে ফারজানা রাব্বী এবং ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ।

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দুটি ধারায় বিভক্ত। দুই উপজেলায় পৃথক দুটি করে কমিটি ছিল। একটি মাহমুদ হাসান–সমর্থিত, আরেকটি ফজলে রাব্বী–সমর্থিত। সেই দ্বন্দ্ব এখনো বিদ্যমান।

মাহমুদ হাসানের অনুসারী নেতারা দাবি করেন, ফজলে রাব্বী বেঁচে থাকতে প্রতিটি নির্বাচনে মাহমুদ হাসান দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন না পেয়েও তিনি নিজে সক্রিয় থেকে দলকে চাঙা রেখেছেন।

মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ২০০৬ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ২০১১ সালের ১১ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। এই সূত্রে দুই উপজেলার তরুণ ও যুবসমাজের মধ্যে তাঁর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের মূল নেতৃত্ব তাঁর সঙ্গে কাজ করছে। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে এলাকার উন্নয়ন করেছেন। তিনি জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছেন। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। উপনির্বাচনে মনোনয়ন পেলে তিনি আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।

এদিকে বাবা ফজলে রাব্বীর অসুস্থতা এবং গত ১৪ মার্চ অনুষ্ঠিত ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হওয়ার পর ফারজানা রাব্বী রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তিনিও দলীয় মনোনয়ন চাইছেন। মরহুম বাবার সুখ্যাতি কাজে লাগিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ফজলে রাব্বীর অনুসারীরা বলেন, সাতবার সংসদ সদস্য ও দুই দফায় ডেপুটি স্পিকার হিসেবে ফজলে রাব্বী রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছেন। বাবার সফলতা মেয়েকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

ফারজানা রাব্বী প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে তিনি শতভাগ আশাবাদী। নির্বাচিত হলে বাবার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করবেন। বাবা যে সাঘাটা-ফুলছড়িকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন, যে মডেল টাউন করার কথা বলেছিলেন, সেই স্বপ্ন পূরণ করতে তাঁর এখানে আসা।

অপর দিকে জি এম সেলিম পারভেজ মাহমুদ হাসানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর প্রভাব-খ্যাতি কাজে লাগিয়ে সেলিম পারভেজ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও। বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি মাহমুদ হাসানকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। আসন্ন উপনির্বাচনে সেলিম পারভেজও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

সেলিম পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, চেয়ারম্যান হয়ে অনেক উন্নয়ন করেছেন। সংসদ সদস্য হলে উন্নয়ন করার পথ আরও সুগম হবে। তাই মনোনয়ন চাইবেন। তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনি আশাবাদী।

জাপার নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, উপনির্বাচনে জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা, গাইবান্ধা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান প্রশাসক আতাউর রহমান সরকার এবং সাঘাটা উপজেলা জাপার সভাপতি, পরপর দুবার নির্বাচিত সাঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম শহীদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে সাঘাটা-ফুলছড়ির ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এ জন্য তিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী। মনোনয়ন পেলে ও উপনির্বাচন সুষ্ঠু হলে আসনটি জাপাকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন।

অপর দিকে গোলাম শহীদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছেন। যে কারণে তিনি পরপর দুবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে পেরেছিলেন। তিনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।